• শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৫৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
তথ্য সংগ্রহকালে সাংবাদিককে হুমকি ॥ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রাজউক কর্মকর্তার সিন্ডিকেট দুদকের জালে প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচবিএম ইকবাল প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে গেছেন শেখ হাসিনা: ড. ইউনূস ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে গুইমারা বাজারে সরকারি ড্রেন দখল করে প্লট নির্মান, নিরব প্রশাসন দাম কমালো জ্বালানি তেলের কোম্পানীগঞ্জে বন্যার পানির তীব্র চাপে ভেঙে গেলো মুছাপুর স্লুইসগেট মোংলায় মন্দির পাহারা ও সর্বসাধারণের নিরাপত্তায় কোস্ট গার্ড তাড়াশে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধন রামগড়ে ইউ.পি সদস্যের উপর সন্ত্রাসী হামলা, বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন চৌদ্দগ্রামে অবৈধ অস্ত্র সহ যুবক আটক!

এমএলএম কোম্পানি এমটিএফই ৫০ জন সিইওর অ্যাকাউন্টে ৯০০ কোটি টাকা

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩

এমএলএম কোম্পানি এমটিএফই (মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ) অবৈধ ক্রিপ্টো কারেন্সির (বিট কয়েন) মাধ্যমে অন্তত ১০০ কোটি ডলার প্রতারণা করেছে। এই এমএলএম কোম্পানি এমটিএফই (মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ) এর বিরুদ্ধে মাত্র ছয় মাস ভার্চুয়ালি ব্যবসা করে সারা দেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা প্রতারণা করার অভিযোগ রয়েছে।

এমটিএফই অ্যাপস দুবাই ভিত্তিক একটি অনলাইন প্রতিষ্ঠান। এটি অনলাইনে বাংলাদেশে ডেসটিনির মতো এমএলএম ব্যবসা শুরু করেছিল। এই প্রতিষ্ঠান সারা বাংলাদেশে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ও সিইও নিয়োগ দিয়েছিল। ইতিমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটির শতাধিক সিইওর (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) ভার্চুয়ালি অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। সারা দেশে এই সিইওদের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ অল্প সময়ে অধিক মুনাফার লোভে পড়ে টাকা দিয়েছে। সিইওরা এই টাকায় ডলারের মাধ্যমে বিট কয়েন ক্রয় করে তাদের অ্যাকাউন্টগুলোতে ট্রান্সফার করে নেয়। এরই মধ্যে গত ১৬ আগস্টের পর হঠাৎ করে এমটিএফই-এর ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তখন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে যে তারা প্রতারিত হয়েছে।

শতাধিক সিইওর মধ্যে ৫০ জন সিইওর ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্টে ৮ কোটি ১৫ লাখ ডলার জমা হওয়ার তথ্য পেয়েছে সিআইডি। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯০০ কোটি টাকা হয়।

সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের তদন্ত শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার বাছির উদ্দিন বলেন, রাজশাহী, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় প্রতারণার তথ্য আমরা পেয়েছি। ইতিমধ্যে রাজশাহীতে একটি মামলাও হয়েছে। সেটি পিবিআই তদন্ত করছে। তবে আমরা সারা দেশে এমটিএফই-এর শতাধিক সিইওকে খুঁজছি। এদের মধ্যে ৫০ জন সিইও সহ আরো অনেকের নামের তালিকা ও তাদের ভার্চুয়ালি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ডলার থাকার তথ্য পেয়েছি। সেসব ডলার হয়তো ক্রিপ্টোকারেন্সি। তা হয়তো আগেই পাচার হয়ে যেতে পারে। তবে আগে আমরা এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি। এরপর তদন্তে নামব।

এরই জের ধরে গত ১৯ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় মোহাম্মদ আল মামুন নামে এক জনকে পুলিশ আটক করেন। আল মামুন এমটিএফই-এর ঢাকা জেলার সিইও। পুলিশ এমটিএফইতে তার নামের অ্যাকাউন্টে চেক করে দেখতে পায় তার নামে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ১১২ ডলার জমা রয়েছে। পুলিশ বলছে, আটককৃত মামুনের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দেয়নি বলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ এমটিএফই-এর ঢাকার সিইও মোহাম্মদ আল মামুনকে আটক করেছে। কিন্তু তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স শাখার উপ-কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, এমটিএফই-এর ঢাকার সিইওকে আটকের তথ্য পুলিশের কাছে নেই। তিনি যদি আটকই হন, আর পুলিশ যদি তাকে ছেড়ে দেয়, তাহলে বিষয়টি তদন্ত করা হবে।

এদিকে, সারা দেশে এমটিএফই-এর প্রতারণায় হাজার হাজার মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। সারা দেশে এমটিএফই-এর টাকার লেনদেন করতে এক জন করে সিইও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই সিইও মাঠ পর্যায়ে মানুষকে অল্প সময়ে অধিক লাভের আশ্বাস দিয়ে টাকা তাদের কাছে জমা দিতে বলে। এর জন্য প্রত্যেকের মোবাইল ফোনে অ্যাপসের মাধ্যমে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়। টাকা জমা দেওয়ার পর তার অ্যাকাউন্টে ডলারের ডিজিট প্রদর্শন করে। ঐ ডলারের বিপরীতে প্রতিদিন লাভ দেওয়া হয়। সেই হিসাবে প্রথম ধাপে কেউ ২৬ ডলার রাখলে প্রতিদিন ৬১ সেন্ট লাভ দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ ধাপে ২০০০১ ডলার রাখলে প্রতিদিন ৫১৬ ডলার ৬৮ সেন্ট করে তার অ্যাকাউন্টে জমা হবে। এই লাভের টাকা অ্যাপসের মাধ্যমে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্টে টাকায় রূপান্তর করে স্থানান্তর করা যায়। এভাবে প্রথম চার-পাঁচ মাসে অনেকের অ্যাকাউন্টে লাভের টাকা জমা হয়।

কিন্তু গত ১৬ আগস্টের পর থেকে অ্যাপসের সব অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় দেখা দেয়। এর পর থেকে সারা দেশে হাজার হাজার গ্রাহকের মধ্যে হাহাকার পড়ে যায়।

বাংলাদেশে ভার্চুয়ালি এমএলএম কোম্পানি এমটিএফই চালু করেন কুমিল্লার বাসিন্দা মাসুদ আল ইসলাম। তবে গত ১৬ আগস্টের আগেই মাসুদ আল ইসলাম দুবাই পালিয়ে গেছেন। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের একটি তালিকা করেছে সিআইডিতে। তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হল।

চট্টগ্রামের সিইও হরিষ, বেলায়েত হোসেন, গাজীপুরের (চান্দনা) বিপ্লব হোসেন, শাহাজাদপুরের আবুল হাসনাত মিয়া, মানিকগঞ্জের সজীব মোল্লা, ঢাকার তামজিদ খান, রাশেদ আলম, মাহমুদুল হাসান, রবি আকতার, শংকর রাজ বংশী, নারায়ণগঞ্জের রুহুল আমিন মোল্লা, কুমিল্লার সিইও মিজানুর রহমান, সিইও মোহাম্মদ আরিফ, সিইও মাসুম, সিইও শাহাজাহান, রহিম, পিএসডি মোশারফ, খায়ের, হাবীব, সোবহান,  মাওলানা হোসাইন, গাজীপুরের জুয়েল রানা, পটুয়াখালীর সিইও মাহাবুব, মাদারীপুরের ইমরুল হাসান, দিনাজপুরের রাজু ইসলাম, ঢাকার উত্তরার কাওছার আলম, নরসিংদীর আমিন খান, ঢাকার মিরপুরের কালশীর মাহমুদ খলিল, টাঙ্গাইলের কালীহাতীর হৃদয় হাসান, বগুড়ার রাম মোহন বর্মণ, নওগাঁর রানীনগরের জেমস পিকে, ঢাকার উত্তরার মোহাম্মদ আল মামুন, বগুড়ার জান্নাতুল ফেরদৌস, নরসিংদীর পলাশের শফিকুল আলম শাহীন, নবীনগরের আব্দুর রউফ, সাভারের জিয়াউল হক হিরো, বরিশালের বানারীপাড়ার মিস লামিয়া, জয়পুরহাটের নিলয় খন্দকার, টাঙ্গাইলের মধুপুরের রাজিয়া সুলতানা ডালিয়া, ঢাকার মিরপুরের আশেকুন নবী ও মাহমুদুর রহমান মজুমদার, আব্দুর রহমান, নওগাঁর নিশাদ আহমেদ, খুলনার আল মামুন, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের আব্দুল হাই, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশরাফুল ইসলাম, হাতিয়ার কামরুজ্জামান, বরগুনার হোসনে আরা, জয়পুরহাটের আব্দুস সালাম, তামান্না বেগম, আলতাফুন নেসা, ঢাকার সাইফুদ্দিন আহমেদ মিজান, ফেনীর নজরুল ইসলাম, নওগাঁর মোহাম্মদ রবিউল আউয়াল, বরিশালের বাবুগঞ্জের কেএম মাহফুজ, মেহেদি হাসান, সাতক্ষীরার তৌফিকুর রহমান, কুমিল্লার মিয়া মো. একরামুল হায়দার দিদার,  কুমিল্লার মো. ইউসুফ  ও রংপুরের আমিনুল ইসলাম।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ