গত ২৯ জুলাই'২৩ তারিখ,শনিবার অনলাইন পত্র পত্রিকায় ও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত দুইটি খবর ও দুইটি ফটো ক্যাপশন দেখে মনে বড় আশ্বস্ত লেগেছিল এই বলে যে দেশে বিরাজমান রাজনীতিতে সুবাতাস বয়তে শুরু করেছে।
একটি হলো, বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এর সাথে ডিবি প্রধান হারুনের এক টেবিলে বসে দুপুরের খাবার গ্রহণ আর অন্যটি হচ্ছে, হাপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি'র নেতা ও সাবেক ডাকসুর ভিপি আমানউল্লাহ্ আমানকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ফল সামগ্রি প্রেরণ ও তার সুচিকিৎসার প্রদানের প্রতিশ্রুতি প্রদান।
এই দুইটি খবর ও ছবি দেখে আমার মত এতদিন মহাভাবনায় কুল হারানো সাধারণ ব্যাক্তির মত অনেকের মনেও আকাশের কালো মেঘ নিমিষে দুরিভূত হয়ে গিয়ে সাদা মেঘের ভেলা ভাসমান হবার কথা। কিন্তুু সেই মনের ভাবনাটা বাস্তবে আর হলোনা, উল্টো আরও কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা দিল মনের আকাশে। কারণ, তার পরের দিন অর্থাৎ রবিবার বিএনপির ঐ দুই নেতা গনমাধ্যমকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় একপ্রকার হাটে হাড়ি ভাঙ্গানোর অবস্থা। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গণমাধ্যমকে পরিস্কারভাবে বলে দিলেন যে তিনি ডিবি প্রধানের দেয়া ভাত খাননি। তিনি খেয়েছেন ডিবি প্রধানের বাসা থেকে আনা ভাত,সবজি আর মাছের এক টুকরা। তিনি আরও বললেন, ডিবি প্রধানের দেয়া ভাত মাংস যা সোনারগাঁও হোটেল থেকে আনা খাবার তাঁর সন্দেহও ছিল। তাই তিনি সেই খাবার খাননি। তবে আপ্যায়ন করে সেই ছবি সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া ঘটনা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও ঘৃণ্যতম কর্মকান্ড বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, যারা এ কাজটি করেছে এটি অত্যন্ত নিম্নরূচীর পরিচায়ক এবং তামাসাপূর্ণ নাটক! এতে কী সরকার প্রমাণ করতে চায় যে আমরা হা-ভাতে? আমরা ভিক্ষা করে খাই....? ইত্যাদি,ইত্যাদি।
এটাই হলো রাজনৈতিকবিদদের রাজনীতির কথা। আমি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বলে থাকি যে, বর্তমান রাজনীতিতে রাজনৈতিক নেতা হতে গেলে তাদের তিনটা গুণ থাকা আবশ্যক। পড়া লেখা নয়, উচ্চ শিক্ষিত নয় কিংবা পান্ডিত্য নয়। তিনটা গুণ হল, অভিনয়ে পারদর্শীতা, মিথ্যা কথা বলা আর বশের নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালণ করা। বাবু গয়েশ্বর রায় এই তিনটি গুণের অবশ্যই অধিকারী। তিনি দলীয় নির্দেশনা মোতাবেক পুলিশের অনুমোদন ছাড়া রাজপথে অবস্থান করেছিলেন। সেখানে আন্দোলনকারী বিএনপির দলীয় লোকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয় এবং সেই সংঘর্ষে তিনি আহত হয়ে রাস্তায় পড়েছিলেন। অতপর পুলিশ তাঁকে ধরে ডিবি অফিসে নিয়ে যায় এবং সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। অতপর তিনি অনেকটা সুস্থ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়েছেন ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের সাথে এক টেবিলে। ছবিতে দেখা যায় তিনি বেশ হাসি খুশীতে খাবার গ্রহণ করেছেন এবং তৃপ্তি সহকারে খেয়েছেন। খাওয়ার সময় তাঁর মাথায়একটা সাদা টুপিতে সুশোভিত। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন যে তিনি একজন সনাতন ধর্নালম্বী। অথচ তাঁর মাথায় সাদা টুপি? তাহলে তিনি কী ধর্মান্তরিত হয়েছেন রাজনৈতিকভাবে? এ প্রশ্নের উত্তর আমিও দিতে পারবোনা। আমি যেটা মনে করি তা হলো তিনি সখ করে সাদা টুপি পরেছিলেন। যা হোক, তিনি যদি এতই নির্ভীক রাজনীতিবিদ হন তাহলে তিনি ইচ্ছার বিরূদ্ধে ডিবি প্রধানের দেয়া খাবার গ্রহণ করলেন কেন? তাঁকে কি ডিবি প্রধান কতৃর্ক খাবার খেতে জোর করা বা ভয় ভীতি দেখানো হয়েছে? আর তিনি জানলেন কী ভাবে যে হোটেল সোনারগাঁও থেকে আনা খাবারে বিষ মিশ্রিত? আর ডিবি বাসা থেকে নিয়ে আসা খাবার অমৃত? তিনি যদি খাবার ইচ্ছা না রাখেন তাহলে ডিবি প্রধানের সামর্থ্য কী আছে একজন বীর রাজনীতিবিদ গয়েশ্বর রায়কে নিজ কার্যালয়ে খাওয়াতে?
আসল কথা হলো তিনি ডিবি প্রধান কতৃর্ক দেয়া খাবার খেয়েছেন এবং তৃপ্তিসহকারে খেয়েছেন। খাবারের আগে বা পরে ডিবি প্রধানের সাথে খোশগল্পও করেছেন। এরজন্য তিনি ডিবি প্রধান হারুন রশীদ সাহেবকে ধন্যবাদ দিয়ে ডিবি অফিস ত্যাগ করেছিলেন নিশ্চয়। কারণ, আমার জানামতে কারোর ভাল আচরন বা ব্যবহারের বিপরীতে অসৌজন্য আচরন করার মত এমন ব্যক্তি বা নেতা বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র নন। কিন্তুু তিনি যখন ডিবি অফিস থেকে চলে আসার পর তাঁর দলীয় লোক,নেতা ও দলীয় বশ(যিনি বিদেশে বসে দল নিয়ন্ত্রণ করেন) নানান প্রশ্নে তাঁকে জর্জরিত করলেন তখনতো আর আরামে ঘুম যাবার কথা নয়। তাই তিনি বোল পাল্টালেন। ঘটনার পরের দিন মিডিয়াকে জানিয়ে দিলেন যে, এ সরকারের এত ক্ষমতা আর অর্থ নাই যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মত এমন নেতাকে কিনে নেবার!
খুবই উত্তম কথা। তবে তিনি যে ডিবি অফিসে দুপুরের খাবার খেলেন, নানান গল্প করলেন আর ছবি তুললেন এটা কি সম্পূর্ণ প্রহসন? এখানে কোন সৌজনবোধ আর শিষ্টাচার বলতে কিছুই নেই? সাংবাদিকরা ছবি তোলার সময় তিনি কী নিষেধ করেছিলেন বা বলেছিলেন যে খবরদার! ছবি তুলবেন না, পত্রিকায় দিবেন না! না, তিনি অবশ্যই বলেন নি। তাহলে এখান থেকে আমরা শিখবো কী? শিষ্টাচারের কি শিখবো? আচ্ছা, আপনারা বলুনতো বাংলাদেশের এমন কোন উদাহরণ আছে কী কোন এক ডিবি প্রধান কোন বিরোধী দল বা রাজনৈতিক নেতাকে ধরে এনে অফিসে বসায়ে গালিগালাজ না করে এমন আদর যত্নসহকারে আপ্যায়ন করে মান সন্মানে ছেড়ে দিয়েছে? তাহলে এখন প্রশ্ন জাগে, বিএনপি যদি আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতায় চলে আসে তখন গয়েশ্বর বাবুগং এই ডিবি প্রধানকে চাকুরীচ্যুত করবেন না কি মাথায় তুলে রাখবেন?
দ্বিতীয়তঃ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমান রাস্তা অবরোধ ও অবস্থানের সময় পুলিশের সাথে বাকবিতন্ডা ও পরে পুলিশ তাঁকে আটক করার সময় তিনি অসুস্থতার কারণে রাস্তায় পড়ে যান বা পড়ে গিয়েছেন। এরপর পুলিশ তাঁকে নিয়ে গিয়ে নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিএনপির নেতা জনাব আমানের অসুস্থতা ও হাসপাতালে ভর্তির খবরে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিরা তাঁর জন্য ঝুড়িতে করে ফলমূল নিয়ে আসেন এবং তাঁর চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। তাঁরা অসুস্থ আমানের সাথেও কথা বলেন এবং তাঁর পছন্দ মত যে কোন হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। কিন্তুু পরেরদিন জনাব আমান গণমাধ্যমকে বলে দেন যে এটা সরকারের সাজানো নাটক। কে বা কারা ফলমূল দিয়ে গেছে তা তিনি জানেন না। তিনি আরও বলেন যে, তাঁকে ছোট করার জন্য সরকার এমন কাজ করেছে এবং ভিসানীতি থেকে রক্ষা পাবার জন্য সরকার এহেন কাজ করেছে।
বাহ! অতি চমৎকার রাজনীতিবিদের রাজনীতি সংলাপ। সরকার খারাপ কাজ করলে সেটা অবশ্যই খারাপ আর ভালো কাজ করলেও সেটা আরও খারাপ। তাহলে সরকারে উচিত ছিল রাজনৈতিক হাঙ্গামায় হতাহতদের খবর গায়ে না মাখা। বিএনপি সরকার যেমন করেছিল ২০০৪ সালে ২১অগাস্ট বর্বর গ্রেনেড হামলায় মারাত্মকভাবে আহতদের কোন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা না দিয়ে। তখন গ্রেনেড হামলায় রক্তাক্ত অঙ্গহানি আহতদের কোন কোন হাসপাতাল চিকিৎসা দিতে অস্বীকারও করেছিল। মারাত্মকভাবে আহত আইভি রহমানকেও নামকরা একটি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ভর্তি করতে প্রথমে অনীহা প্রকাশ করেছিল।
শুধু এবারের ঘটনায় রাজনৈতিক শিষ্টাচার আহত হয়নি। আহত হয়েছিল সেই ২০১৫ সালে যখন বেগম জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকো মারা যাবার পর প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ ও সমবেদনা জানানোর জন্য তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম জিয়ার বাসভবন পর্যন্ত গিয়ে বাসায় ঢুকতে না পেরে ক্ষুন্ন মনে ফিরে আসতে হয়েছিল।
তাহলে রাজনীতিবিদদের কাজ থেকে আমরা কী শিক্ষা নিলাম? প্রতিপক্ষদের সাথে সবসময় দন্ডে লিপ্ত থাকা, প্রতিহিংসা করা, প্রতিপক্ষ উপকার করলেও তা অস্বীকার করা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা, ভালকে ভাল না বলা, প্রতিপক্ষের সাথে সবসময় অসৌজন্যমূলক আচরন করা এইতো?
বিরোধী রাজনৈতিক দল সবসময় বলে থাকেন যে তাদের বিপরীতে সবসময় সরকারের পুলিশ, সরকারের প্রশাসন, সরকারে গোয়েন্ডা ন্যাক্কারজনকভাবে কাজ করে।
দুইদিন আগে বিএনপির এক দফা এক আন্দোলনে নয়পল্টনে মহাসমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুলিশ,প্রশাসন ও সরকারী কর্মজীবিদেরকে হুশিয়ার করে দিলেন যে, এ সরকার অবৈধ সরকার। এই সরকারের পক্ষে আপনারা কোন কাজ করবেন না, সহযোগিতা করবেন না। তিনি আবার তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালনের জন্যও বলেছেন। ঠিক যেন ১৯৭১ সালে রেসকোর্স ময়দানে লাখো মানুষের সমাবেশে পেশ করা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। সেদিন বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলে দিয়েছিলেন, " আজ থেকে দেশের সব পুলিশ,প্রশাসন,অফিস আদালত আমার নির্দ্দেশে চলবে...."। এখন কি সেই ১৯৭১ সালের রাজনৈতিক আন্দোলন যে, মি.ফখরুলের নিদ্দেশনায় দেশ চলবে? মি.ফখরুল সাহেবের জানা উচিত যে, এমন নির্দ্দেশনা একমাত্র বঙ্গবন্ধুই দিতে পারে আর কেউ নয়।
সত্তর দশকে একটা জনপ্রিয় বাংলা ছায়াছবির (নায়করাজ রাজ্জাক, শাবানা ও ফারুক অভিনীত) নাম "সখী তুমি কার''। এখন প্রশ্ন হতে পারে, পুলিশ, প্রশাসন, সরকারী কর্মচারী বা কর্মজীবি আপনারা কার? আপনারা কি সরকারের? না বিরোধীদলের? না কারোর নয়?
সবার জানার কথা তা হলো, দেশে যে সরকারই আসুক পুলিশ,প্রশাসন আর সাধারণ কর্মচারী বা কর্মজীবিরা সবসময় সেই সরকারের পক্ষে কাজ করে থাকে। সেটাই সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। সরকারী বেতনভোগী কারো কারোর ভিন্নমত থাকতে পারে বা কোন দলের পক্ষ অথবা আনুগত্য থাকতে পারে। কিন্তুু সেটা কোনভাবেই প্রকাশ করা যাবেনা। যদি কেউ করে থাকে অবশ্যই সেটা রাষ্ট্রদ্রোহীতার সামিল। আর তাই দেশে নৈরাজ্য, সহিংসতা আর সাধারণ জনগনের জানমাল রক্ষা করার জন্য সরকারের পক্ষে পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে হয় বৈ কি? এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশদেরও আত্মহুতি দিতে হয়, প্রাণ দিতে হয় অথচ সে খবর কেউ রাখেনা। আর রাস্তায় একজন সন্ত্রাসী মারা গেলেও তার খবর রাস্ত্র হয়ে যায়। আমেরিকাও খবরদারী করে বসে।
দেশে আবারও আগের মতই সহিংসতার আন্দোলন, সভা, মিছিল, অবরোধ আর হাতাহাতি ও গাড়ী ভাংচুরের খেলা শুরু হয়েছে। এসবের ভিডিও ক্যাপশন সহসা ভাইরাল করে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে আমেরিকা আর জাতিসংঘে। যে কোন বিরোধী দল সেটা খুব ভালো করে জানে কি ভাবে কোন উপায়ে পশ্চিমাদের কাছে নালিশ করা যায়, তাদের কাছে কিভাবে সরকারকে হেয় করা যায় যাতে ক্ষমতা আরোহনে রাস্তা মসৃন হয়। আর সরকার এখন নিঃসহায়। অনেকটা এরকম যে, স্ত্রী স্বামীর বিরূদ্ধে অনেক কিছু বানিয়ে আধা সত্য আধা মিথ্যা কথা বলে নালিশ বা নিন্দা করতে পারে এবং এ সমাজ বেশিরভাগ সেই স্ত্রীর কথাই শুনে। আর স্বামী কখনই তার স্ত্রীর নামে দূর্নাম ছড়াতে পারে না। কারণ, সেটা স্বামীর দূর্বলতা বেশি প্রকাশ পায়। আর সে কারণে বোধহয় সরকার ঐ দুইটি ঘটনার ছবি একটা হলো ডিবি অফিসে বিএনপির নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আপ্যায়ন আর বিএনপির আর এক নেতা অসুস্থ আমানউল্লাহ আমানকে হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিরা ফলের ঝুড়ি নিয়ে দেখা করার ছবি দুইটি ভাইরাল করে দিল। উদ্দেশ্য আর কিছুই নয়, বিরোধীদলের প্রতি সরকারীর এমন মহানুভতা কেউ না দেখুক, কেউ না বুঝুক অন্তত আমেরিকা আর জাতিসংঘের যেন সুদৃষ্টি পড়ে।
অন্যন্য ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের কথা না হয় বাদ দিলাম। দেশে প্রধান রাজনৈতিক দল হল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি। এই দুইদল ক্ষমতায় গিয়ে অনেকবার দেশ শাসন করে এসেছে। এখন একটানা পনের বছর ধরে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসীন। জানি এই আওয়ামীলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সেই আওয়ামীলীগ নয়। এ আওয়ামীলীগ এখন হাইব্রিটে ভরা আওয়ামীলীগ।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর সুদীর্ঘ ২১ বছর পরে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসতে সক্ষম হয়েছে।
শেখ হাসিনাকে বারংবার প্রমাণ দিয়ে দেখানো হয়েছে যে তিনি হিন্দুত্ববাদী নন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ আর রোজা পালন করে, কোরান থেকে নানান আয়াত পাঠ করে দেখানো হয়েছে যে তিনি সাচ্চা মুসলমান। কারণ, এদেশে রাজনৈতিকগণ ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে সেই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর থেকে। তবুও এত কিছুর পরও শেখ হাসিনার চলনেও যেন বাঁকা। বর্তমানে দেশে যা কিছু উন্নয়ন ঘটেছে বলতে গেলে সেইসব শেখ হাসিনার যাদুর হাত ধরেই এসেছে। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি স্থিতিশীল বিরাজ করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ পেরিয়ে আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশ পথে এগুচ্ছি। তবুও না কি আওয়ামীলীগ খারাপ, স্বৈরাচারী, দেশ শাসনে ব্যর্থ? যেভাবেই হোক বিএনপি এখন ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তুু তারা আবার ক্ষমতায় এসে দেশকে কী দেবে তা এখনো স্পষ্ট করে বলেনি। তারা ক্ষমতা এসে আবার হাওয়া ভবন পরিবর্তে পাওয়া ভবন বানাবে কি না? বা আবার তারা ১০ ট্রাকের চেয়েও ২০ ট্রাক অবৈধ অস্ত্রের আমদানি ঘটাবে কি না? আল কায়েদা, বাংলাভাইয়ের মতন সন্ত্রাসীদের আরও জন্ম দিবে কি না? পার্বত্য চট্টগ্রামের এলাকা নতুন করে ভারতের বিচ্ছন্নতাবাদীদের আখাড়া হয়ে উঠবে কি না এর নিশ্চিয়তা দেবে কে? জানি আওয়ামীলীগ যেমন খারাপ ঠিক তেমনি বিএনপিও খারাপ। অথবা আওয়ামীলীগও ভাল আর বিএনপিও ভালো। কিন্তুু কোন দলটা বেশি খারাপের চেয়ে একটু খারাপ বা কোন দলটা ভালোর চেয়ে অধিক ভালো তা বিশ্লেষণ করার অধিকার শুধু তাদের মুখে বলা জনগনের নয়, তা অবশ্যই এ দেশের জনসাধারণের।
সরকার রাজনীতিতে সুবাতাস বয়ে দেয়ার রাস্তা সৃষ্টি করলেও পরবর্তীতে সে সুবাতাস বিরোধীদলের কাছে হয়ে গেল দুষন বাতাস। সামনে জাতীয় নির্বাচন। রাজনীতিতে শেষ বলতে কিছুই নেই। তাই এমন সুবাতাস আবার অন্যভাবে,অন্যউপায়ে বয়ে যাবার রাস্তা সুগম হোক, রাজনীতিবিদদের সুমতি হোক। রেসারেসি,পরস্পর হানাহানি, যুদ্ধাংদেহী মনোভাব পরিত্যাগের মাধ্যমে রুচীশীল রাজনৈতিক চর্চা হোক এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ সুস্থ ও গ্রহণযোগ্য হোক সেই প্রত্যাশা রাখি।
(দীনময় রোয়াজা, কলাম লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সাবেক ডিজিএম, বাংলাদেশ ব্যাংক।)