বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহীর দুর্গাপুর থানার এসআই কুদ্দুস এর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন প্রতিবন্ধী বাচ্চু বেপারী! ৬০ বছরের এই শারীরিক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধকে লাঠি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে রাজশাহীর দুর্গাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আ: কুদ্দুস এর বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় দুর্গাপুর থানার ( অফিসার ইনচার্জ) ওসি'র কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার। কিন্তু, অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছেন ওসি।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে ৪ নং দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়নের পাঁচবাড়ি সেলিমের বাড়ির সামনে লাঠি দিয়ে মারধরের ঘটনাটি ঘটে। প্রতিবন্ধী বাচ্চু বেপারী (৬০) পাঁচুবাড়ি গ্রামের মৃত আ: রব বেপারীর পুত্র। তিনি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী । তার কাছে শারীরিক প্রতিন্ধীর আইডি কার্ড রয়েছে ।
প্রতিবন্ধী বৃদ্ধকে লাঠি দিয়ে পেটানোর ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসি এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় এসআই কুদ্দুসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।
অভিযোগ উঠেছে, পারিবারিক জমিসংক্রান্ত অভিযোগ সূত্রে দু্র্গাপুর থানার দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়নের বিট পুলিশের দায়িত্বে থাকা এসআই কুদ্দুস পিটিয়ে আহত করেন প্রতিবন্ধী বাচ্চু বেপারীকে । প্রতিবন্ধী বাচ্চুর বাম হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শুধু তাই নয় এসআই কুদ্দুস দুর্গাপুর থানায় যোগদানের পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের আখের গোছাতে দাপিয়ে বেড়ান। এসআই কুদ্দুস বিশেষ করে মাদক ও অবৈধ পুকুর খননকারীচক্রের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন এ উপজেলায়। তার চালচলন মস্তবড় পুলিশ অফিসারেফ ন্যায়। উনার কথাবার্তায় মনে হয় তিনি থোড়াই কেয়ার করেন না তার উধ্বর্তন কোন পুলিশ কর্মকর্তাকে।
আরো অভিযোগ উঠেছে, দুর্গাপুর থানার ওসি নাজমুল হকের আশ্রয়-প্রশয়ে এসআই কুদ্দুসসহ বেশ কয়েকজন দারোগা অনৈতিক সুবিধা পেয়ে অপরাধ মুলক কর্মকাণ্ড করে বেড়ান। আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব পালন না করে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যতা ও ফসলি জমিতে পুকুর খননের দিকনির্দেশনায় নিয়োজিত থাকেন তারা।এদিকে ওসি নাজমুল হকের যোগদানের পর থেকে উপজেলায় বেড়েছে চুরি ও ছিনতাইয়ের মত বড়বড় ঘটনা। এসব ঘটনায় থানায় মামলা হলেও আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান নেই বললেই চলে৷ তবে এ মৌসুমে কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খননের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দুর্গাপুর থানা পুলিশের নাম উপজেলা জুড়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে।
প্রতিবন্ধী পেটানোর খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে এসআই কুদ্দুস দেলুয়াবাড়ি ইউপি'র নারী সদস্য সুবেদা বেগম এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী বাচ্চু ও তার পরিবারকে তথ্য দিতে নিষেধ করতে বলেন। নারী সদস্য সুবেদা মুঠোফোনে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে প্রতিবেদককে বলেন, দুর্গাপুর থানার এসআই কুদ্দুস কর্তৃক প্রতিবন্ধী মারধরের শিকার হয়েছে ঘটনা সত্য। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক আসার খবর শুনে এসআই কুদ্দুস আমাকে ফোন করেছিলান। তারা (ভুক্তভোগীর পরিবার) যেন কিছু না বলে তা বলতে।
ভুক্তভোগী, প্রতিবন্ধী বাচ্চু বেপারী বলেন, পারিবারিক জমিসংক্রান্ত ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার সকালে আমার নাতিকে দিয়ে আমাকে ডাকতে পাঠায় থানার এসআই কুদ্দুস। ঘটনাস্থলে গিয়ে পারিবারিক জমিসংক্রান্ত ঘটনার বিষয়গুলো এসআই কুদ্দুস স্যারকে জানায়। কুদ্দুস স্যার আমাকে অভিযোগের কথা বলে উত্তেজিত হয়ে গাড়ি থেকে লাঠি বের করে মারধর করে। আমার হাতে এখনো তার লাঠির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অভিযুক্ত বাচ্চু বলেন, দুর্গাপুর মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়া শেষে থানায় গিয়ে মারধরের কথা ওসি স্যারকে বলি । স্যার বলেন, অভিযোগ দিয়ে যান বিষয়টি দেখছি। তিনি আরো বলেন, আমি শারিরীক প্রতিবন্ধী অসুস্থ মানুষ এসআই কুদ্দুস স্যার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কেন আমাকে লাঠি দিয়ে পেটালো এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
প্রতিবন্ধী বাচ্চু বেপারীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, "আমার বাবা একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী অসুস্থ মানুষ। বাবাকে সুস্থ করতে দীর্ঘদিন রাজশাহীর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোন রকম চলতে পারে । হঠাৎ আজকে আমার অসুস্থ বাবাকে ডেকে নিয়ে এসআই কুদ্দুস কথার মাঝে কেন পেটালেন। বাবার হাতে আঘাতের চিহ্ন দেখে অনেক কষ্ট লাগছে।
এর বিচার চাই আমরা।"
প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবন্ধী বাচ্চুর ভাই আব্দুল মালেক বেপারী বলেন, এসআই কুদ্দুস স্যার আমাকে ডেকে নিয়ে বলেন তোমাদের মধ্যে কে কে জমির ওয়ারিশ। বিস্তারিত শুনে আমার ভাই প্রতিবন্ধী বাচ্চুকে ডেকে নিয়ে আসেন। পরে গাড়ি থেকে লাঠি বের করে মারতে থাকেন। আমাকেও মারবে এমন ভয় পেয়ে আমি সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কামাল ও জব্বার বলেন, একজন অসুস্থ প্রতিবন্ধী লোককে মারধর করে দুর্গাপুর থানার এসআই কুদ্দুস অন্যায় করেছে। ন্যাক্কারজনক এমন ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত করে ওই দারোগার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ বাচ্চুকে মারধরের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে দুর্গাপুর উপ-পরিদর্শক (এসআই) কুদ্দুস বলেন, "বাচ্চু ও তার পরিবারের সাথে জমিজমার বিরোধ দীর্ঘদিন থেকে চলছে। অভিযোগ পেয়ে ঘটনা স্থলে গিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে বলি বাচ্চুকে।
সে বলে কেন থানায় যাবো ; পরে ধমক দিছি, মারিনি। আমার হাতে ছোট্ট লাঠি ছিল তার হাতে লেগেছে। তিনি বলেন, এটা নিয়ে তারা নাকি কি যেন ঝামেলা করছে মেজাজ টায় খারাপ হয়ে যাচ্ছে। "
এবিষয়ে স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, এসআই কুদ্দুস প্রতিবন্ধী বাচ্চুকে জরুরি সেবা ৯৯৯ এর গাড়িতে থাকা লাঠি বের করে মারধরের কথা স্বীকার করেছেন। তবে লাঠির একটা আঘাত বাচ্চুর শরীরে লেগেছে অপরটি তার সাথে থাকা কনস্টেবলের গায়ে লেগেছে বলে জানিয়েছেন।
এব্যাপারে দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল ইসলাম মুঠোফোনে মারধর ও থানায় প্রতিবন্ধী বাচ্চু বেপারীর অভিযোগ করার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, "আরে না।" অভিযুক্তের হাতে আঘাতের চিহ্ন আছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- "তো কি হইছে? পুলিশের কাজ পুলিশ করবে না!? এসব ফাউ গুজব ছড়ায় কেন বুঝিনা। পুলিশ কাউকে মারে নাকি। পুলিশের ভিতরে থেকে যতটুকু কাজ ততটুকু পুলিশ করবে।"
এস আই কুদ্দুসের এমন মারমুখী আচরণে এলাকাবাসী অসন্তুষ্ট। রক্ষক যদি ভক্ষকের ন্যায় আচরণ করে; সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন করে, জুলুম চালায় তখন সে বিচার কে করবে? সাধারণ মানুষ কার কাছে গিয়ে ন্যায় পাবে? এ প্রশ্ন এখন এলাকাবাসীর মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুটিকয়েক কর্মকর্তার এমন উদ্ধত আচরণ দমনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কঠোর হস্তে দমনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে জনগণের আস্থা পুলিশবাহিনীর উপর হ্রাস পাবে বলে অনেকে মনে করেন।