নজরুল ইসলাম জুলু:
মানে রাজশাহী মহানগরীর অন্যতম মাথাব্যথা 'কিশোর গ্যাং'। কিশোর গ্যাং এর কালচার রাজধানী থেকে শুরু হলেও তা বর্তমানে শান্তির নগরী রাজশাহী কে অশান্ত করে তুলেছে। এই কিশোর গ্যাং নগরীর আইন শৃঙখলা নষ্ট করছে। অধিকাংশ এলাকাতেই কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার নেপথ্যে রয়েছে এলাকার ক্ষমতাসীন ব্যক্তি, বড় ভাই, ও মাস্তানরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে এই সমস্ত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের মদদ দেয় এলাকার 'বড় ভাই' ও ক্ষমতাসীন নেতারা। এলাকার পরিত্যক্ত ভবন, মাঠ, ঈদগাহ, কবরস্থান ইত্যাদি জায়গায় এরা আস্তানা গেড়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় এই সমস্ত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা হয়ে পড়েছে বেপরোয়া। চুরি,ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মেয়েদের উত্যক্ত করা, হত্যা,মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন, ছোট খাটো বিষয় কে কেন্দ্র করে মারামারি, অস্ত্র প্রদর্শনের মতো জঘন্য অপরাধে তারা জড়িয়ে পরছে। সব মিলিয়ে রাজশাহীতে কিশোর গ্যাংয়ের
কিশোর গ্যাং আজিজ বাহিনী
অত্যাচারে নগরবাসী অতিষ্ঠ। সামান্য অর্থের লোভে এরা হত্যার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এমনই একটি বেপরোয়া কিশোর গ্যাং হলো রাজশাহী মহানগরীর টিকাপাড়া (খুলিপাড়া) এলাকার 'খুলিপাড়া গ্যাং' ওরফে 'আজিজ গ্যাং'। এই কিশোর গ্যাং টি উক্ত এলাকার আজিজ এর মদদে এলাকায় ডালপালা মেলেছে। আজিজ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে তার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ব্যবহার করে আসছে।
সম্প্রতি ২২শে জুন, ২০২৩ আজিজ বাহিনী নগরীর খুলিপাড়া এলাকায় তার বাহিনী দুউর এলাকার কয়েকজনের উপর দিবালোকে প্রকাশ্যে হত্যার উদ্দেশ্যে লোমহর্ষক হামলা চালায়। আজিজ বাহিনীর হামলায় উক্ত এলাকার মুকুল, মনা ও আলতাব গুরুতর আহত হয়। আজিজ বাহিনী মুকুলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করে। আহত আলতাব এর এক হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং অন্য
হাতের কয়েকটি আঙুল কেটে দেয়। আলতাব এর বিচ্ছিন্ন কব্জি টি চিকিৎসকরা জোড়া লাগাতে পারে নি। মনা কে হাতে ধারালো অস্ত্র গুরুতর আঘাত করে। সৌভাগ্য ক্রমে মনা'র হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়নি। মুকুল ও মনা রামেক থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পর বর্তমানে বাড়িতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আলতাব কে ঢাকা থেকে উন্নত চিকিৎসার পর বাড়িতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কব্জি বিচ্ছিন্ন আহত আলতাক
উক্ত ঘটনায় আলতাব এর ছেলে সাকিব বাদি হয়ে আজিজ বাহিনীসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। ঘটনাটি পুরো শহরে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। উক্ত এলাকার বাসিন্দারা ঘটনা ঘটার পর থেকেই ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই আজিজ বাহিনী এলাকায় অনেক দিন থেকেই ত্রাস সৃষ্টি করলেও। এলাকার মানুষজন প্রাণের ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কিছু করতে বলতে পারে নি। এমন ঘটনার পর থেকেই এলাকাবাসী আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পরেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে আজিজ বাহিনী ৩ মাস পূর্বেই আহত ব্যক্তিদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিল।
আহত মুকুল
অনুসন্ধানে জানা যায় আজিজ বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন ও রাজশাহী মহানগরীর পুলিশ কমিশনার মহাদয় কে অভিযোগ জানানো হয়েছিল।কিন্তু আজিজ বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি। এমন ঘটনার পর আজিজ বাহিনী খুলিপাড়া এলাকা থেকে পালিয়ে গেলেও নগরীর বিভিন্ন জায়গায় এখনো
প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজিজ বাহিনী কে গ্রেফতার এর ব্যাপারে পুলিশ উদাসীনতা দেখাচ্ছে বলেও আহতদের পরিবার অভিযোগ করছে। কয়েকদিন পূর্বে আহত মুকুল ও মনা'র চাচাতো ভাই কাজল কে ( অটো ড্রইভার) সিএনবি'র মোড়ে এলাকায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করার অপচেষ্টা চালায় আজিজ, তার ভাই হিটলার, আজিজের ছেলে সজীব ও তার ভাতিজা সুইট।
পরে কাজল চিল্লাপাল্লা করলে আসামিরা সেখান থেকে চলে যায়। কাজল জানায় উক্ত এলাকায় হিটলারের শ্বশুর বাড়ি। এই মামলা অন্যান্য আসামীরাও নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অকপটে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন আহতদের পরিবার। এমন লোমহর্ষক ঘটনা ঘটানোর পরও কেন আজিজ বাহিনী কে গ্রেফতার করা হচ্ছে না এই নিয়ে হচ্ছে অনেক জল্পনা কল্পনা। এলাকাবাসী ও
আহত মনা
আহতদের পরিবার পুলিশের এমন নিস্তব্ধ ভূমিকায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ। আহত মনা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার তো করছেননা বরং আমাদের কেই নানান ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। অন্যদিকে মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েও তদন্তকারী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা'র বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। এর পূর্বে ২০২০ সালে গোলাম মোস্তফা কে নানান বিতর্কতার কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি
বজায় রাখতে সাবেক পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক তাকে বোয়ালিয়া মোডেল থানা থেকে অন্য থানায় বদলি করেছিলেন। পরবর্তীতে উনি নানান তদবির এর মাধ্যমে আবার বোয়ালিয়া মোডেল থানায় যোগ দেন। আজিজ বাহিনীকে গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশ কেন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছে না এই নিয়ে উঠছে নানান প্রশ্ন। আহতদের ও খুলিপাড়া এলাকার দাবি আজিজ বাহিনী কে যেন দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক। নইলে এরা আরও বেশি ভয়াবহ রূপ নিবে।
উল্লেখ্য ভয়ংকর সব অপরাধের সাথে যুক্ত কিশোর গ্যাং গত বছরের ১০ অক্টোবর মাসে ৫৬ জন সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ১২টি থানায় একযোগে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৫৬ জন কিশোর গ্যাং সদস্যকে আটক করে। এরমধ্যে ৩২ জনকে মুচলেকা নিয়ে তাদের অভিভাবকের কাছে তুলে দেয়া হয়। বাকি ২৪ জনের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ অভিযান আরো জোরতাল করা হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের সাবেক মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কিশোর গ্যাং সারা দেশে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। তারা পাড়া মহলর প্রভাবশালী, মাস্তান বা বড় ভাইদের হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে।
কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা একসাথে মাদক সেবন, পাড়া মহল্লায় নারীদের উত্ত্যক্ত করাসহ ছোট ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারামারি ও ঝগড়া বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় খুন ধর্ষণের মত ঘটনাও ঘটছে। কিশোর গ্যাং এর সদস্য অপরাধ করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করছে এবং পরিকল্পনা করছে। এ পরিস্থিতিতে সাবেক পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের নির্দেশে গত বছরের ১০ অক্টোবর মাসে কিশোর গ্যাং ও কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে আরএমপি ১২ থানার বিভিন্ন এলাকায় সর্বাত্মক অভিযান চালানো হয়েছিল।
ওই ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত কিশোর গ্যাং গ্রুপের আর কোনো হালনাগাদ তালিকা তৈরি করা হয়নি। কিশোর গ্যাং এর কোন সদস্য, গডফাদার কিংবা বড় ভাইদের ও আইনের আওতায় আনা হয়নি।
প্রতিদিন ছিটকে চোর, মাদকাসক্তদের আটক করে ঘটা করে। বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশের বিরুদ্ধ অভিযোগ রয়েছে মাঝে মধ্যেই দুই একজন বড় বড় রাঘব বোয়াল ধরা পরলেও সেসব ব্যক্তির ছবি কিংবা তথ্য প্রদান করা হয় না সংবাদকর্মীর কাছে। সম্পত্তি সময়ে এমনই বেশ কয়েকটি ঘটনার ঘটেছে। এসবই ঘটে অর্থাৎ বিনিময়ে। এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে বিভিন্ন সংবাদকর্মীর কাছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের পক্ষে থেকে কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
ন/জ