পার্বত্য উপজেলা লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের একটি খালের নাম 'ইয়াংছা খাল'। পার্শ্ববর্তী উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উৎপত্তি খালটি ইয়াংছা হয়ে মাতামুহুরী নদীতে সংযোজিত হয়েছে । এর দৈর্ঘ প্রশ্ত আর পানির প্রবাহ মাতামুহুরী নদীর মতনই বলা যায়। নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে দু'পাড়ের বাসিন্দাদের বাড়ি ঘর ক্ষেতের ফসল তলিয়ে দিত খালের পানি। চলতি বছর বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ২০২২-২৩ অর্থ বছরে "৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের ১ম পর্যায়ে ইয়াংছা খাল পুনঃখনন" প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। পুনঃখনন কাজের দৈর্ঘ্যঃ ৫ কিলোমিটার, চুক্তিমূল্য ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। এটি পূন:খননের ফলে বদলে গেছে খাল পাড়ের কয়েকটি গ্রামের চিত্র। দু'পাড়ের বাসিন্দারা এবার বর্ষায় শঙ্খামুক্ত। খালের মাতামুহুরী নদী থেকে পাঁচ কিলোমিটার অংশে ৪৫ ফুট তলদেশ, ১-৩ মিটার পূন: খননের ফলে পানির প্রবাহ রীতি ফিরে পেয়েছে। এর ফলে বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাবে ইয়াংছার বেশ কয়েকটি গ্রাম, বানিজ্যিক এলাকা, সরকারি স্থাপনা। তবে পুন: খনন টেকসই করতে হলে খাল পাড়ের জমিতে তামাকপাতা চাষ নিষিদ্ধ করতে হবে। অন্যথায় অর্থহীন হয়ে পড়বে, সরকারের প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে জনবান্ধব এই প্রকল্পটি। বৃক্ষ নিধন, পাথর উত্তোলন, সনাতনী পক্রিয়ায় জুম ও তামাকপাতা চাষসহ পাহাড়ের পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে পলিমাটিতে ভরাট হয়ে নালায় পরিণত হয়েছিল খালটি। কিন্তু সেই চিত্র এখন বদলে গেছে। পুন: খননের ফলে এখন খালের তলদেশ প্রশস্ত হয়েছে। স্থানীয়রা কাজের শুরুতে সম্ভাব্য তামাক ফসলের ক্ষতির আশঙ্কায় খনন কাজের বিরোধিতা করেছিল। খননের পর তারা জানান, এখন তারা স্বস্তি বোধ করছেন। ইয়াংছা খালটি পাহাড়ের পলিমাটি জমে নালায় পরিণত হয়েছে। পানি চলাচল করতে পারত না। শুষ্ক মৌসুমে খালের তলদেশের প্রশস্ততা ছিলো ৫-৮ ফুট। পানির প্রবাহ ছিলনা ছোট ছোট চর জেগে উঠেছিল। খননের ফলে তলদেশের প্রশস্ততা ৪৫ ফুট হয়। এর ফলে শুস্কৌসুমে সমান্তরালে পানির প্রবাহরীতি ফিরে এসেছে। স্থানীয়রা জানান, "এখন খালের ৫ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। আরো ১০ কিলোমিটার পুন: খনন করা হলে স্থায়ী সমাধান আসবে"। তারা জানান, তামাকপাতার চাষ বন্ধ করে খালপাড়ে জমির মালিকেরা পরিবেশ ও জীবন বান্ধব ধান, গম, আলু, মরিচ, বাদাম, পেঁয়াজ, রশুন, ডাল, শিমসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করতে সরকারিভাবে বাধ্য করা উচিৎ''। ঠিক এইভাবে মাতামুহুরী নদী পুন: খনন করার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ সব বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বান্দরবান কার্যালয় সূত্রে জানাযায়, মাতামুহুরী নদী পুন:খননসহ দু'তীরের বাসিন্দাদের বন্যামুক্ত করতে জাইকাসহ যৌথ কর্মযজ্ঞ চালানোর সমীক্ষা চলছে। এই পুন:খনন প্রকল্পটি অনুমোদন বাস্তবায়ন হলে কৃষি অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপ্লব ঘটানো যাবে। এমনটা মনে করেন এই জনপদের মানুষ।