• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন

নৌকাকে হারিয়ে মেয়র জায়েদা

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩

শঙ্কা কাটিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনে অবিস্মরণীয়, অনিন্দ্য এক বিজয়ের সাক্ষী হলেন গাজীপুরের মানুষ। উৎসবমুখর পরিবেশে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটের মাধ্যমে তারা বেছে নিলেন আগামী দিনের নগর অধিপতিকে।

দলীয় পদ থেকে হয়েছিলেন বহিষ্কৃত, হারিয়েছিলেন নগরপিতার গদিও। বাতিল হয়েছে নিজের মেয়র পদের প্রার্থিতা। এরপরও সাধারণ মানুষের ওপর ভর করে নিজের মাকে প্রার্থী করে নেমেছিলেন ভোটযুদ্ধে। নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে সেই যুদ্ধে সফলভাবেই যেন উতরে গেলেন গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তার একক ক্যারিশমায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মা জায়েদা খাতুন জয়লাভ করেছেন বিপুল ব্যবধানে। এ নির্বাচনে জায়েদা খাতুনের পাশাপাশি সরকার এবং নির্বাচন কমিশনও যেন জয়লাভ করল। কোনোরকম সহিংসতা এবং কারচুপির অভিযোগ ছাড়াই মডেল নির্বাচনের নজির গড়ল তারা।

নির্বাচনে জায়েদা খাতুনকে মানুষ যেন দুহাত উজাড় করে ভোট দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ সিটি করপোরেশনে মেয়রের কুর্সিতে বসবেন তিনি। রাজনীতির মারপ্যাঁচে অনভ্যস্ত জায়েদা খাতুন বাড়ির চৌকাঠ পেরোননি কোনোদিন। ছেলে রাজনীতিবিদ হলেও নিজে সবসময় এড়িয়ে চলেছেন সভা-সমাবেশ। সেই জায়েদা খাতুনই যেন নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে মন জয় করে নিলেন গাজীপুরের মানুষের। গৃহিণী হিসেবে ঘর সামলানো স্বল্পভাষী মানুষটি এখন সামলাবেন গাজীপুরের পঁয়ষট্টি লাখ মানুষের অভাব-অভিযোগ। দায়িত্ব নেবেন অগোছালো গাজীপুরকে মডেল সিটি গড়ার।

তবে এ নির্বাচনে জায়েদা খাতুনের বিজয়ের মধ্য দিয়ে ভোটের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা হারালেন মার্জিত এবং বিনয়ী রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা। মানুষের ভাষ্য, তুলনামূলক মার্জিত হলেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের অভাব ছিল আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর। গাজীপুর মহানগরের মতো শিল্প এলাকার সরকারি দলের শীর্ষ নেতা হলেও তিনি মানুষের দুয়ারে পৌঁছাতে পারেননি। দীর্ঘদিন রাজনীতি করলেও সাধারণ মানুষের কাছে হতে পারেননি আস্থার প্রতীক। নির্বাচনের প্রচারেও ছিল গাফিলতি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে ঢিলেমি ছিল প্রচারণায়। বড় বড় শোডাউন এবং রোড শো করলেও মানুষের দ্বারে দ্বারে যাননি। যার ফলও পেলেন হাতেনাতে। সরকারি দলের প্রার্থী হওয়ার পরও হারলেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে।

তবে এর ঠিক উল্টোপথে হেঁটেছিলেন জায়েদা খাতুন। ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। বড় সভা-সমাবেশ এড়িয়ে ভোটারদের কাছে পৌঁছেছিলেন জায়েদা। দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুর মহানগরে রাজনীতি করা এবং মেয়রের পদে থাকায় আলাদা একটা বলয়ও ছিল জাহাঙ্গীর আলমের। দল থেকে বহিষ্কারের ভয়ে অনেকেই সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে থাকলেও ভোটের মাঠে কাজ করেছেন জায়েদা খাতুনের জন্যও। সরেজমিন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরেও দেখা গেছে এর প্রমাণ। অনেকেই নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে ভোট চেয়েছেন জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ির জন্য।

গতকাল বৃহস্পতিবার নারী-পুরুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট প্রদান করেন গাজীপুর সিটির নির্বাচনে। নানা শঙ্কা থাকলেও নির্বাচনের দিন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শক্ত অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। পাশাপাশি কঠোর ছিল নির্বাচন কমিশনও। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের কাছে গাজীপুর ছিল অ্যাসিড টেস্ট। সরকারের কাছেও চ্যালেঞ্জ ছিল সুষ্ঠু নির্বাচন করা। তবে নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রায় সব প্রার্থীই।

নির্বাচন কমিশনের ৪৮০ কেন্দ্রের ঘোষিত বেসরকারি ফলাফলে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। মাছ প্রতীকে আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪, লাঙ্গল প্রতীকে এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২, হাতপাখা প্রতীকে গাজী আতাউর রহমান ৪৫ হাজার ৩৫২, গোলাপ ফুল প্রতীকে মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬, ঘোড়া প্রতীকে মো. হারুন-অর-রাশিদ ২ হাজার ৪২৬ এবং হাতি প্রতীকে সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে গাজীপুর জেলা পরিষদ ভবনের বঙ্গতাজ মিলনায়তনে এ নির্বাচনের ‘ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র’ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম এ ঘোষণা দেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ