বিশেষ প্রতিনিধি
কোটি টাকা ঘুষ লেনদেনের বিনিময়ে মেট্রোরেলের (এমআরটি লাইন-১) শাহজাদপুরস্থ প্রবেশ-প্রস্থানের ডিজাইন জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই অপকর্মের অপকৌশলে একদিকে নিরীহ এক বাসিন্দার জায়গা পুরোপুরি গ্রাস করা হয়েছে, অন্যদিকে রক্ষা করা হয়েছে প্রভাবশালীদের বাড়িঘর। ভয়ংকর এ জাল জালিয়াতির সাথে ঢাকা জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাজাধানীর ভাটারা থানাধীন শাহজাদপুর এলাকার আব্দুল মোতালেবের ছেলে নিজামুল হক ভূমি মন্ত্রণালয়, সড়ক, জনপথ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। ওই অভিযোগে বলা হয়, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট এর নতুন বাজার মেট্রোরেল ষ্টেশন নির্মাণ প্রকল্পে প্রতারণাপূর্বক তার পত্রিক সম্পত্তি হোল্ডিং নং-ক, ৪৩/২, প্রগতি সরণি, শাহজাদপুর, গুলশান-২, জমির শ্রেণী- বাড়ী, মৌজা-ভাটারা-১৫, জে.এল নং-১৫, ঢাকা সিটি খতিয়ান- ১৭২০, দুটি দাগে মোট জমির পরিমাণ ৮২৪ অযুতাংশ অধিগ্রহণের তালিকাভূক্ত করা হয়েছে (এল.এ কেস নম্বর- ০৩.১৫.০৮/২০২৩-২০২৪)।
তিনি তার অভিযোগে জানান, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে এর উত্তর বাড্ডা, নতুন বাজার ও নদ্দা মেট্রোরেল ষ্টেশনের Entry-Exit, Fire-Exit, Ventilation উপঃ নির্মাণ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের নিমিত্তে জেলা প্রশাসক ঢাকার দপ্তর থেকে ১১০ স্বারক মূলে ২৯/১০/২০২৩ খ্রীঃ তারিখ জমির মালিক মোঃ নিজামুল হককে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মোঃ রোকনুজ্জামান স্বাক্ষরিত নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশে উল্লেখ থাকে যে, হোল্ডিং নং-ক, ৪৩/২, প্রগতি সরণি, শাহজাদপুর, গুলশান-২, জমির শ্রেণী- বাড়ী, মৌজা-ভাটারা-১৫, জে.এল নং-১৫, ঢাকা সিটি খতিয়ান- ১৭২০, দুটি দাগে মোট জমির পরিমাণ ৮২৪ অযুতাংশ অধিগ্রহণের বিষয়ে কোন আপত্তি থাকলে নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসক ঢাকা‘র বরাবর আপত্তি দাখিলের পরামর্শ দেয়া হয়।
সেই মোতাবেক জমি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে উক্ত জমিতে ভোগদখলীয় মালিকগন গত ১২/১১/২০২৩ খ্রীঃ তারিখ জেলা প্রশাসক এর দপ্তরে আপত্তি দাখিল করেন। জেলা প্রশাসক এর দপ্তরে আপত্তি গ্রহণের পর ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মোঃ রোকনুজ্জামান গত ২৮/১১/২০২৩ ইং তারিখে ২১৯ স্মারকমূলের এক চিঠিতে ০৪/১২/২০২৩ ইং তারিখে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় উপস্থিত হয়ে শুনানিতে অংশগ্রহণের জন্য নোটিশ প্রদান করেন।
৪ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ যেতে না পারায় ৬/১২/২০২৩ ইং তারিখে জেলা প্রশাসক, ঢাকা দপ্তরে এডিসি পারভেজ চৌধুরীর আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়, শুনানি শেষে শত শত জনতার সামনে আদালত থেকে জাননো হয়, আমার বসতি থেকে ১০০ ফুট দুরে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে এর উত্তর বাড্ডা, নতুন বাজার ও নদ্দা মেট্রোরেল ষ্টেশনের Entry-Exit, Fire-Exit, Ventilation উপঃ নির্মাণ প্রকল্পের স্থাপনা নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ শুনানিতে জেলা প্রশাসক নিজেও উপস্থিত ছিলেন বলে জানান নিজামুল হক। এরপর থেকে জেলা প্রশাসকের দপ্তরের এলএ শাখার বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে আসছি।
দেশের বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারনে বেশ কিছুদিন যোগাযোগ বন্ধ থাকার হঠাত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মোঃ রোকনুজ্জামান স্বাক্ষরিত নোটিশে জানানো হয়, স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন ২০১৭ (২০১৭ সনের ২১ নম্বর আইন) এর ৭ ধারা মোতাবেক উক্ত জায়গা অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানানো হয়। প্রকাশ্য আদালতে নিজামুল হকের বসতভিটের ১০০ ফুট দূরে প্রকল্পের নির্মাণ কাজের কথা ঘোষণা দেওয়া হলেও চুপিসারে হঠাত নিজামুল হকের বসতভিটে হুকুম দখল সিদ্ধান্তের কারণ বোধগম্য হচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করে জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের বাড়িঘর রক্ষার নামে আমার পুরো বাড়িটি গ্রাস করা হচ্ছে।
এক্ষেত্রে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও ঢাকা জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। ভুক্তভোগী বাসিন্দা বিষয়টি তদন্তপূর্বক ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের ঘোষণা মোতাবেক প্রকল্প নির্মাণ ও ভূমি অধিগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।