ইলিয়াস হোসেন, একজন প্রতিভাবান তরুণ যিনি এখন ইংরেজি ভাষার জনপ্রিয় শিক্ষক, সফল শিক্ষা উদ্যোক্তা এবং প্রেরণাদায়ক বক্তা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার অসাধারণ উপস্থিতি লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে অনুপ্রাণিত করেছে। নিজের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান ‘ইলিয়াস ইংলিশ ওয়ার্ল্ড’ থেকে তিনি ইতোমধ্যে ৬ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে ইংরেজিতে দক্ষ করে তুলেছেন। তার স্বপ্ন ও নিষ্ঠার স্বীকৃতিস্বরূপ অর্জন করেছেন অনেক সম্মাননা।
কঠিন শৈশব, অদম্য স্বপ্ন
মাত্র ১০ বছর বয়সে প্রবাসী বাবাকে হারিয়ে ইলিয়াসের পরিবার চরম সংকটে পড়ে। তার বড় ভাই মো. ইউসুফ পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। পারিবারিক নানা সংকটে ভাই-বোনরা লেখাপড়া থেকে সরে পড়লেও ইলিয়াসের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ তাকে পিছিয়ে যেতে দেয়নি। পরিবারের সহায়তায় এবং নিজের প্রচেষ্টায় ২০০৯ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর টিউশনির টাকায় এইচএসসি শেষ করে ভর্তি হন চৌমুহনী কলেজে অনার্সে অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে।
সংগ্রামের নতুন অধ্যায় ও জীবনের বাঁকবদল
২০১৩ সালে পরিবারের চাপ সামলাতে লেখাপড়া ছেড়ে ঢাকায় জাহাজের যন্ত্রাংশ মেরামতের কাজে যোগ দিলেও সেখানে তার মন বসেনি। ২০১৪ সালে নিজ জেলা নোয়াখালীতে ফিরে গিয়ে দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এর পর তিনি নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে দ্বিতীয়বার মাস্টার্স করছেন।
শিক্ষক থেকে উদ্যোক্তা
শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজের ইংরেজি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ইলিয়াস বিভিন্ন কোর্স করেন এবং অনলাইনে বিখ্যাত ব্যক্তিদের বক্তব্য ও শেখার কনটেন্ট নিয়মিত অধ্যয়ন করেন। তার দক্ষতা ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। ২০১৭ সালে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে কাজ করে তিনি হাজারো শিক্ষার্থীকে ইংরেজি ভাষার প্রশিক্ষণ দেন।
ইলিয়াস ইংলিশ ওয়ার্ল্ডের যাত্রা
২০২০ সালের জানুয়ারিতে বনশ্রীতে শুরু হয় ‘ইলিয়াস ইংলিশ ওয়ার্ল্ড’। তবে মহামারি করোনার কারণে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২০ মাস বন্ধ থাকে। এ সময় ইলিয়াস অনলাইনে জুয়েলারি ব্যবসা শুরু করেন এবং সেই ব্যবসায় থেকে অর্থ যোগান দিয়ে সংগ্রামের মধ্যেও প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখেন। ২০২১ সালে লকডাউন শিথিলের পর নতুন উদ্যমে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে বনশ্রী ও উত্তরা শাখায় শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ইংরেজি শেখার সুযোগ পাচ্ছে।
বর্তমানে ‘ইলিয়াস ইংলিশ ওয়ার্ল্ড’ এর বনশ্রী শাখায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। সম্প্রতি উত্তরা শাখাও চালু হয়েছে। তার প্রচেষ্টা তাকে শুধু শিক্ষার্থীদের প্রিয় শিক্ষকই নয়, বরং ইংরেজি শিক্ষার জগতে একটি পরিচিত নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
স্বীকৃতি ও প্রেরণা
ইলিয়াস হোসেন শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও প্রশিক্ষক হিসেবে নিজের স্থান করে নিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে ভারতের বাকুড়া খ্রিস্টিয়ান কলেজ, সাভার যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ নানা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ইংরেজি শেখার সহজ পদ্ধতি নিয়ে তিনি লিখেছেন বই ‘সবার জন্য ইজি স্পোকেন’, যা প্রশংসিত হয়েছে পাঠকমহলে।
ইলিয়াস স্যার: এক প্রেরণার নাম
ইলিয়াস হোসেন বলেন, “ছোটবেলা থেকেই ইংরেজি শেখার প্রতি আমার তীব্র আগ্রহ ছিল। অনেক সংগ্রাম পেরিয়ে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছি।আমার কাছে মনে হয়েছে মানোন্নয়ন ও নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার একমাত্র জায়গা হচ্ছে ঢাকা। সে স্বপ্ন নিয়ে আমি ঢাকায় আসি। আজকের এ অবস্থানে আসতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। সবার দোয়া ও ভালোবাসায় আমরা এগিয়ে চলেছি।’
পুরস্কার ও সম্মাননা
ইলিয়াসের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০২৩ সালে সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড পান। এছাড়া ইংলিশ অলিম্পিয়াড, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল স্কিম সার্ভিস, সেলফ অ্যাম্বাসেডর অব বাংলাদেশ, এবং বেবিটিউব সম্মাননাও তার ঝুলিতে রয়েছে।
গ্রামের সেই ছেলেটি আজ ‘ইলিয়াস স্যার’ নামে পরিচিত। তার জীবনগল্প শুধু প্রেরণাদায়কই নয়, অন্যদের জন্য এক উজ্জ্বল পথের দিশারি।