লামা-আলীকদম ফাঁসিয়াখালী ৪৪ কিলোমিটার পাহাড়ি সড়কটি এখন মোটর বাইকারদের দুর্দান্ত দখলে।
পাহাড়ি জেলা পার্বত্য বান্দরবানের লামা উপজেলা। পাহাড়ের অন্যসব উপজেলার আগেই সমতলের সাথে লামা-আলীকদম উপজেলার সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে,
এই সড়কে চলাচল করা মোটর সাইকেলগুলোতে পাখা লেগে যায়। গতিবেগ আর শব্দে মনে হয়, স্থল বিমান আবিস্কৃত হয়েছে উন্নত এই বঙ্গের পর্বতে। আমাদের লামা আলীকদমের পাহাড়ি মেঠো পথগুলো উঁচু নীচু পাহাড়ের ঢালু দিয়ে বয়ে চলা। এখানকার নদীও যেমন সাপের ন্যয় এঁকেবেঁকে, রাস্তাগুলো তাই। রাস্তার প্রতিটি বাঁকেই সামনের পথ অদৃশ্য থাকে। শব্দ সংকেত আর নিজ যানটি নিয়ন্ত্রণ রেখে খুব সতর্কতার সাথে এগোতে হয় বাইকারকে। অন্যথায় হয় মৃত্যু! নয়তো পঙ্গুত্ব। ইদানিং অনেকেই হলিউডের নায়কের চরিত্রে নিজেকে কল্পনায় স্বাচ্ছন্দ বোধ করতে দেখা যায়। এই ঝুঁকিপূর্ণ পথ ধরে চলতে যারা নায়কভাব নেয়, তাদের বেশির ভাগই তরুন, শিশু, কিশোর এবং যুবক। বড়লোক বাবার সন্তানরা আড়াই, তিন লাখ টাকা দামের বিভিন্ন মড়েলের মোটর বাইকের পেছনে বন্ধু-বান্ধবী নিয়ে মজাদার ভ্রমণে বের হতে দেখা যায়(!)। বিভিন্ন ঈদ-উৎসব পরবে এমন দৃশ্য পরিলক্ষিত হয় বেশি। মোটর বাইকারদের বড় একটা অংশ তরুণ- কিশোর। এসব তরুণদের মধ্যে একটা আবেগ থাকে। থাকে এক ধরনের পাগলামো নায়কীয় বম্বের হিরোর স্বভাব। দূরন্ত গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর একটা নগ্ন প্রতিযোগিতা করার মানসিকতা তাদের মাঝে বেশির ভাগই লক্ষ্য করা যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে গ্রাম্য সড়কে নারী বাইকারও নজরে আসে। তবে তূলনামূলক তারা শান্ত গতিতে বাইক রাইড করে। সড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে যে, কিছু তরুণ বাইকার আছে তাদের ইমোশন এবং মোটর বাইকের গতি দুটির একটাকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে অকালে মৃত্যুকে আলিঙ্গণ অথবা পুঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে হয় তাদেরকে(!)। এই সড়কে বিগত দেড় দশকের মধ্যে বেশ কযেকটি প্রাণহানিসহ পুঙ্গত্ব বরণ করতে হয়েছে বেপরোয়া বাইকারদেরকে। এইতো কিছুদিন আগের কথা। আমি লাইনঝিরিস্থ একটি চায়ের দোকানে বারান্দায় বসে আছি। দুরন্ত গতিতে ছুটে আসছে একটি মোটরসাইকেল। চালক একজন দামাল ছেলে। তার সামনে বাতাসের গতিতে ছুটছে একটি খালী ট্রাক। মোটরবাইকার ঠিক পৌর টোল পয়েন্টের কাছে, ওভার টেক করে ট্রাকের সামনে এসে (ঠিক যেন সিনেমার গল্প'র মতন) বাইকটি দাঁড়িয়ে যায়। ভাগ্যিস ট্রাক চালক হার্ড ব্রেক করে। এর কয়েক সেকেন্ড পর বাইকার নিজ পাদুকা ছুড়ে মারে চালকের গায়ে(!)। ট্রাক চালক রাস্তার মাঝখানে গাড়ি ব্রেকে রেখে লাফিয়ে নেমে পড়ে। দু'জনের বাকবিতন্ডা এবং মারামারির উপক্রম হয়। তাদের ডায়ালগ শুনে দৃশ্যটি বেশিক্ষণ উপভোগ করতে পারিনি। সড়কে এই বেপরোয়া বাইক চলাচলে গতিবেগ নিয়ন্ত্রনে ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা সজাগ হওয়া দরকার।