জালিয়াতির মাধ্যমে একই ফ্ল্যাট দেখিয়ে একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে একটি চক্র। সম্প্রতি এই চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেফতারের পর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। চক্রের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ ও অন্যান্য তথ্য প্রাথমিক পর্যালোচনায় চিহ্নিত ১০ ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজশ যাচাই করছে তদন্ত সংস্থা।
সিআইডি বলছে, এনআইডি সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় একাধিক ভুয়া এনআইডি ও কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) তৈরি করে চক্রটি। এরপর ফ্ল্যাট ও জমির একাধিক জাল দলিল তৈরি করেন। পরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ফ্ল্যাটের বিপরীতে একাধিক ঋণ নিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে। এ কাজে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যাদের নামে পাওয়া গেছে তাদের গ্রেফতার করা হবে। এছাড়া এ ঘটনায় এনআইডি ও ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত একাধিকের নামও উঠে এসেছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যুগান্তরকে জানান, চক্রটি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা কাগজপত্র নিয়ে প্রায় সব ব্যাংকেই ঋণ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। তারা ঋণসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে অন্তত ১২টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে সক্ষম হয়েছে। হিরু মোল্লা নামে একটি কমার্শিয়াল ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের পর ব্যাংক কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা সম্পত্তির কাগজে তিনি এই চক্রকে ঋণ দিয়ে লাখ লাখ টাকা দিয়েছেন।
জানা গেছে, তদন্তের এ পর্যায়ে সিআইডির কর্মকর্তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চক্রের লেনদেনের তথ্য যাচাই করছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ১২টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে। তবে তদন্ত শেষে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও হাতিয়ে নেওয়া টাকার প্রকৃত পরিমাণ উঠে আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে অনুসন্ধান শেষে অর্থ পাচার আইনে মামলা করে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। এতে চক্রের মূলহোতা জয়নাল আবেদীনসহ ২৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করা হয়। একাধিক অভিযানে বিভিন্ন এলাকা থেকে চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেফতার করে সিআইডির দল।
চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতারের পর গত ৪ মে অতিরিক্ত আইজিপি সিআইডি প্রধান ও মোহাম্মদ আলী মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, চক্রটি বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট বা জমি কেনার জন্য সংশ্লিষ্ট অফিস বা ব্যক্তির কাছে গিয়ে তা পছন্দ হয়েছে বলে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে বায়না করেন। এরপর মালিকানার তথ্য যাচাইয়ের কথা বলে দলিল এবং অন্যান্য কাগজপত্রের কপি সংগ্রহ করে সেই দলিল দিয়েই অনুরূপ দলিল তৈরি করেন। পরে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন কৌশলে ওই ফ্ল্যাট বা জমির বিপরীতে মোটা অঙ্কের ঋণ মঞ্জুর করায়। এরপর সেই ঋণের টাকা তারা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করে। এতে ফ্ল্যাটের মূল মালিক চরম বিপদে পড়েন।
সিআইডি জানায়, গ্রেফতার জয়নাল মিরপুরে একটি সোনার দোকানের কর্মচারী ছিলেন। পরে তিনি ফ্ল্যাট জালিয়াতি শুরু করেন। প্রায় শতকোটি টাকার মালিক জয়নালকে এসব কাজে তার দুই স্ত্রী রোমানা সিদ্দিক ও রাবেয়া আক্তার মুক্তা সহযোগিতা করে থাকেন। জয়নালের নামে ছয়টি সক্রিয় এনআইডি রয়েছে। এসব এনআইডি দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে ৫০টির অধিক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রতারণার টাকায় তার ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সাততলা বাড়ি, তিনটি ফ্ল্যাট, মিরপুর ও আশকোনায় তিনটি ফ্ল্যাটসহ আরও বেশ কিছু সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।