৩ মার্চ ২০২৪ শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে সমতলে বসবাসরত ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ দানের দাবিতে ত্রিপুরা ছাত্র সংসদ (টিসিএস) এর উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ত্রিপুরা ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ধনকিশোর ত্রিপুরা। এতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রুমিও ত্রিপুরা, চট্টগ্রাম জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক রুপন ত্রিপুরা, হাটহাজারী উপজেলার কলেজের শিক্ষার্থী ফুলচান ত্রিপুরা, ফটিকছড়ি উপজেলার কলেজ শিক্ষার্থী রিপন ত্রিপুরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশের ত্রিপুরা ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী অন্যতম ছাত্র সংগঠন “ত্রিপুরা ছাত্র সংসদ” মূলত ত্রিপুরা জনজাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সামাজিক সেবামূলক কাজ করে থাকে। বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিসত্তা সমূহের মধ্যে ত্রিপুরা অন্যতম।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মানুষ চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি, মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, হাটহাজারী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ রাজবাড়ী এবং কক্সবাজার জেলায় বাস করে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, স্মরণাতীত কাল থেকে এই ভূখণ্ডে ত্রিপুরা জনজাতির মানুষ বসবাস করে আসছে।
এককালে ত্রিপুরা জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বেশ সমৃদ্ধ ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সময়ের আবর্তে ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি দিন দিন বিলুপ্তির পথে এগোচ্ছে।
২০১৭ সাল থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে চাকমা, মারমা, ককবরক, সাদরি এবং গারো এই পাঁচটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের মাতৃভাষায় পাঠদানের লক্ষ্যে পাঠ্য বই বিতরণ করেছে।
কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর শিশুরা মাতৃভাষায় আংশিকভাবে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেলেও সমতলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর মানুষ তার নিজস্ব মাতৃভাষাকে নিয়ে গর্ববোধ করে। পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম বাঙালি জাতি ১৯৫২ সালে নিজ মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। মাতৃভাষার প্রতি মানুষের গভীর শ্রদ্ধা ও অকৃত্রিম ভালোবাসা আছে বলেই এই আত্মত্যাগ।
২০০০ এর দশকে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭,০০০ ভাষা বিদ্যমান ছিল বর্তমানে যার সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো। এর মধ্যে বেশিরভাগ ভাষাই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আছে এবং অনেকগুলো ভাষা ইতোমধ্যে হারিয়ে গিয়েছে। সর্বাধিক বিলুপ্তির পথে রয়েছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাষা গুলো।
২০০৪ সালে প্রকাশিত একটি অনুমানে বলা হয়েছিল যে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বর্তমানে কথিত ভাষাগুলির প্রায় ৯০% ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য অঞ্চলের তুলনায় সমতলের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা সংকটের মুখে রয়েছে। অনেকে নিজস্ব মাতৃভাষা হারিয়ে বাংলা ভাষায় ভাব বিনিময় করতে বাধ্য হচ্ছে। যদি সময়োপযোগী কার্যকর কোন উদ্যোগ না নেওয়া হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে ত্রিপুরাদের প্রাণের ভাষা “ককবরক”হারিয়ে যাবে।
সমতলের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা রক্ষা, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে মাতৃভাষায় পাঠদানের ক্ষেত্রে সংবাদ সম্মেলন থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো দাবি করা হয়।
উক্ত দাবিসমূহ:
১. সমতলে বসবাসরত ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের স্বার্থে মাতৃভাষায় পাঠদান পদ্ধতি চালু করা।
২. কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক পর্যায়ে সমতলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী থেকে শিক্ষক নিয়োগদান।
৩. মাতৃভাষায় পাঠদানের জন্য শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ।
৪. ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সঠিক ইতিহাস, সংস্কৃতি সংবলিত তথ্য পাঠ্যপুস্তকে উপস্থাপন করা।
সংবাদ সম্মেলনের আগে সকাল ১১ টায় চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসার মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
পরবর্তী দুপুর ২টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এস রহমান হলে এ বিষয় নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।