খাগড়াছড়ির গুইমারাতে থামছেনা পাহাড় খেকোদের দৌরাত্ম। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পাহাড় কাঠার মহোৎসবে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত পাহাড় নিখোঁজ হয়েছে। পাহাড়খেকোরা একটি বিশেষ মহলের ছত্রছায়ায় পাহাড় কাটলেও ব্যবস্থা নেয়না প্রশাসন। পাহাড়খেকো চক্রটি প্রশাসনের নাকের ডগায় পাহাড় কাটলেও প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করছে। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে এসব পাহাড় কাটা। স্থানীয় নির্মাণ ও উন্নয়নের অযুহাতে গুইমারা উপজেলার বড়পিলাক, মুসলিমপাড়া, তৈকর্মা, হাতিমুড়া, বাইল্যাছড়ি, ছোটপিলাক, চিংগুলিপাড়া, লুন্দুক্যাপাড়া, বুদংপাড়া এমনকি বাজার সংলগ্ন ফজরটিলার পাহাড়সহ উপজেলার অর্ধশত পাহাড় কাটা হয়েছে। সুযোগ সন্ধ্যানী পাহাড় খেকো এই চক্রটির কাছে মাটি কাটা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা কখনো বলে মসজিদের মাটি, কখনো বলে কবরস্থানের মাটি, কখনো মাদ্রাসার মাটি, কখনো মক্তবের মাটি, কখনো বৌদ্ধ মন্দিরের মাটি আবার কখনো বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাটি বলে নিজেদের অপকর্মগুলো জায়েজ করার চেষ্টা করে। পাহাড়ের এসব মাটি ইটভাটা ও স্থানীয়দের বাড়ীঘর নির্মাণে বিক্রি করছে। প্রতি গাড়ি মাটির মুল্য পনেরশত টাকা থেকে দুই হাজার টাকা।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ধারা ৬ এর (খ) এ বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কতৃর্ক সরকারী বা আধা-সরকারী বা স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা যাবে না। তবুও থামছেনা পাহাড় খেকোদের দৌরাত্ম। এসব পাহাড় কাটার কারনে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গুইমারা থানার পাশেই লুন্দুক্যাপাড়ায় সুুউচ্ছ পাহাড় কাটা হচ্ছে। জানা যায়, এ জমির মালিক আনিস মিয়া। টাকার বিনিময়ে তিনি পাহাড়টি কাটতে দিয়েছেন। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বও দুটি ব্যানার টানিয়ে এই পাহাড় কাটা বন্ধ করেছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব চেীধুরী। সেখানে একটি ব্যানার এখনও টানানো আছে। অথচ পাহাড়ের গায়ে লাগানো ব্যানারটি সরিয়ে ফেলে মাটি কাটা হচ্ছে।
গুইমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীব চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, বিষয়টি আমি জানি। গুইমারা মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য এই পাহাড়টি কাটা হচ্ছে। মডেল মসজদি ছাড়া অন্য কোথাও মাটি দিতে পারবেননা এমন আন্ডার টেকেন দিয়ে অনুমতি দেয়া হয়েছে। যদি মডেল মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও মাটি বিক্রি করে তাহলে জেল জরিমানা করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে আইন অমান্য করে পাহাড় কাটা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, পাহাড় কাটা বিষয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। এ কারনে প্রতিদিন পাহাড় কাটার প্রবনতা বাড়ছে। গুইমারা উপজেলা ঘোষনা হওয়ার পর পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ প্রয়োগ হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
গুইমারা উপজেলার অর্ধশত পাহাড় কাটার বিষয়ে কথা হয় পরিবেশ অধিপ্তরের উপপরিচালক (চট্রগ্রাম) মো: ফেরদৌস আনোয়ারের সাথে তিনি বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়ে আমরা সবসময় কঠোর অবস্থানে আছি। বিভিন্ন সময় পরিবেশ অধিদপ্তর পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে মামলা করে পাহাড় কাটা বন্ধ করছে। গুইমারা উপজেলা ঘোষনা হওয়ার পর পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।
এদিকে গুইমারা উপজেলায় কর্মরত বেশ কজন গণমাধ্যম কর্মীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সম্প্রতি পাহাড় খেকো চক্রটির বিভিন্ন স্থানে মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে অধিকাংশ সময় তারা উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি আছে এমনটাই বলে আসছে। আর পাহাড় কাটা সহ অনুমতির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়কে কোন প্রকার তথ্য দিলেও তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো তথ্যদাতাদের নাম প্রকাশ করে বিভিন্ন মহলে গণমাধ্যম কর্মীদের বানানো হয়েছে ভিকটিম। প্রশাসনের এমন উৎসাহ পেয়ে পাহাড় খেকো চক্রটি গণমাধ্যম কর্মীদের প্রাণনাশের হুমকি সহ বিভিন্ন প্রকার ক্ষতি সাধনের হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে।
সম্প্রতি দেখা গেছে পাহাড় কাটার স্থান থেকে ১টি বোল্ডড্রোজার, একটি ড্রাম ট্রাক সহ রাত তিনটার দিকে তিনজনকে আটক করেছে গুইমারা উপজেলা প্রশাসন। পরদিন সকালে স্থানীয়দের তদবিরে কোন প্রকার ব্যবস্থা না নিয়েই গাড়িগুলো সহ আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মজার বিষয় হলো একই দিন সন্ধ্যা থেকে আবারো একই স্থানে পাহাড় কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে চক্রটি। রাতে আটক, দিনে ছাড়, সন্ধ্যায় আবার একই স্থানে একই কায়দায় মাটি কাটার বিষয়টি যেন ইঁদুর বিড়াল খেলা মত। তাইতো সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে এসব পাহাড় খেকো চক্রদের রূখবে কে??