নজরুল ইমলাম জুলু: রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন ১২টি থানার মধ্যে অবস্থানগত কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ থানা হলো বোয়ালিয়া মডেল থানা। বোয়ালিয়া মডেল থানা রাজশাহী মহানগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। অত্র থানাটি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ১৪টি পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড (ওয়ার্ড নং-৯,১০,১১,১২,১৩, ১৫,১৬,২০,২১, ২২,২৩,২৪,২৫,২৭) এবং ০২টি আংশিক ওয়ার্ড (ওয়ার্ড নং-১৪,১৮) এলাকার সমন্বয়ে গঠিত। ২০১৬ সাল থেকেই অত্র থানায় নিয়োজিত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুনামের সাথে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন।
বিগত বছর গুলোতে বোয়ালিয়া মডেল থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে যে সমস্ত পুলিশ কর্মকর্তারা যোগ দিয়েছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই উঠেছে দায়িত্বে অবহেলা, ঘুষ বাণিজ্য সহ নানান অভিযোগ। ফলে সমালোচিত ওইসব ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা গ্রহনযোগ্যতা পান নি।নানান অভিযোগ, অনিয়মের জন্য তাদের কে বোয়ালিয়া থানা থেকে অন্যত্র বদলিও করা হয়েছে। ২০১৬ সালের বোয়ালিয়া থানার ততকালীন ওসি শাহাদত হোসেন এর পর থেকেই বোয়ালিয়া থানায় সমালোচিত ওসি দের যোগদানের ধারা অব্যাহত রয়েছে।
বোয়ালিয়া থানার এমনই একজন সমালোচিত ওসি ছিলেন নিবারন চন্দ্র বর্মন। ২০২০ সালে তিনি বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পদে যোগদান করেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে বোয়ালিয়া থানায় ওসি আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই তিনি তার অধীনস্থ পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করতেন। তাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতেন। তিনি ঘুষ বাণিজ্য, দূর্নীতি, হুমকি ইত্যাদি অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পরেন। অভিযোগ উঠে ওসি নিবারন ২০২০ সালের অক্টোবরে রাজশাহীর একজন সিনিয়র সাংবাদিক এটিএন বাংলা'র স্টাফ রিপোর্টার সুজাউদ্দিন ছোটন কে হত্যার হুমকি প্রদান করেছিলেন। এ বিষয়ে সাংবাদিক ছোটন ১১অক্টোবর, ২০২৩ সালে ততকালীন পুলিশ কমিশনার এর কাছে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের জন্য ওসি নিবারনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রদান করেন।
একই সালের ১লা অক্টোবর কাতার প্রবাসী আজিজুল ও ফারুক নামক দুইজন শ্রমিককে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাওয়ার পথে নগরীর বর্ণালীর মোড় এলাকায় গাড়ি থেকে নামিয়ে ওসি নিবারনের নেতৃত্বে ৪টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ওসি নিবারনের যোগসাজশে ২টি সোনার বার গায়েব করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। ভুক্তভোগী প্রবাসী শ্রমিকদের পরিবার সে সময় অভিযোগ করেন ২টি সোনার বার ফেরত দেয়া বাবদ ওসি নিবারন তাদের কাছ থেকে ৫লক্ষ টাকা ঘুষ নিলেও সোনার বার ২টি ফেরত দেননি। ২৬জুন, ২০২১ সালে ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মনের বিরুদ্ধে নিজ থানায় ( বোয়ালিয়া) কর্মরত কনস্টেবল মনিরুল ইসলামকে কর্তব্যরত অবস্থায় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠে ।
মার্চ, ২০২১ সালে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে তিনি তার একজন সহকর্মী নারী পুলিশ কর্মকর্তা কে কুপ্রস্তাব দেন। ঐ নারী কর্মকর্তা ওসি নিবারনের কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় তার স্বামী কে শিবির কর্মী সাজিয়ে মামলা দেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল। নিবারণ চন্দ্র বর্মণের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন জাতীয়, স্থানীয় দৈনিক ও টেলিভিশনেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। সাংবাদিকদের ক্রমাগত লেখালেখি ও বিভিন্ন মহলের চাপে ওসি নিবারনের বিরুদ্ধে হয়েছিল বিভাগীয় তদন্ত।
পরবর্তীতে তার অনিয়মের ঘটনা তদন্ত করতে পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে একটি তদন্ত কমিটি রাজশাহীতে গোপনে ও সরেজমিনে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে রিপোর্ট জমা দেন। অবশেষে নানান বিতর্কের পর রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার চরম বিতর্কিত ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মনকে ২২ জানুয়ারি, ২০২২ এর মধ্যে বোয়ালিয়া থানা ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে তাকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ওরফে এপিবিএন এ বদলি করার নির্দেশ প্রদান করেছিল পুলিশ সদরদপ্তর।
বিতর্কিত এই ওসির বিদায়ের পর বোয়ালিয়া মডেল থানায় ২৩জানুয়ারি,২০২২ তার স্থলাভিষিক্ত হোন তারই উত্তরসূরী আরেক বিতর্কিত ওসি মাজহারুল ইসলাম। প্রসঙ্গত, মাজহারুল ইসলাম বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে আরএমপির রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বোয়ালিয়া মডেল থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালীন তার বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অভিযোগ উঠে। বিভিন্ন অভিযোগের কারণে ওসি মাজহারুল কে নিয়েও শুরু হয় বিতর্ক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিনি বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি থাকাকালীন অর্থাৎ গত বছরের ২২শে জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বোয়ালিয়া থানা এলাকায় অন্তত ১০টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে, আদালতের আদেশ না মেনে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের সঙ্গে তিনি গোপনে মিটিং করতেন। হয়রানি করতেন নিরীহ মানুষদের। নগরীর বিভিন্ন হোটেলে খাবার খেয়ে বিল দিতেন না । জড়িত ছিলেন চাঁদাবাজির সঙ্গে। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও তার সখ্যতা ছিল। এছাড়াও ভাষা সৈনিকপুত্রকে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা, সাংবাদিকদের সাথে দুর্ব্যবহার, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ধর্ষণ মামলা ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা সহ উল্টো ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীকে খারাপ ইঙ্গিত করা। অবৈধ টাকায় বিপুল সম্পদ গড়ে তোলা ইত্যাদি অভিযোগ উঠে ওসি মাজহারুল এর বিরুদ্ধে। বিতর্কিত এই ওসির বিরুদ্ধে রাজশাহী জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির গত ৩টি সভায় ধারাবাহিকভাবে বেশকিছু গুরুতর অভিযোগ তোলেন ভাষা সৈনিকপুত্র ও রাজশাহী প্রেস ক্লাব সভাপতি সাইদুর রহমান। এরই ধারাবাহিকতায় জনাব সাইদুর রহমান গত ২০শে ফেব্রুয়ারি
রাজশাহী বিভাগীয় উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে এসব অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ পুলিশ সদরদপ্তরের এক আদেশে তাকে আরএমপি থেকে রংপুরে রেঞ্জ স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়।
ওসি মাজহারুল ইসলামের পর আরএমপি বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ হিসাবে ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ যোগদান করেন সোহরাওয়ার্দী হোসেন। তিনি নাটরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিলহরি বড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী তে যোগদান করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগ থেকে লেখা পড়া করার সুবাদে এ শহরের বিভিন্ন মহলের সাথে তার গভীর সম্পর্ক আগে থেকেই গড়ে উঠে।
বোয়ালিয়া থানায় যোগদানের পর তিনিও তার পূর্বসূরিদের পথ ধরেই হাঁটা শুরু করেন বলে অনেকে অভিযোগ তোলেন। বোয়ালিয়া থানায় যোগদানের পর থেকেই ঘুষ বাণিজ্য, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা, ওয়ারেন্ট ভুক্ত বিরোধী দলের আসামীদের সাথে গোপন বৈঠক, ইত্যাদির মাধ্যমে অল্প সময়েই তিনিও গড়ে তোলেন অঢেল সম্পত্তি। অনেকেই অভিযোগ তোলেন ঘুষ ছাড়া তিনি কোন কাজই করেন না। তার সময় বোয়ালিয়া থানা এলাকায় তার ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাং, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, পাড়া মহল্লার ছিঁচকে সন্ত্রাসীরা আরও বেশি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।
সাধারণ মানুষ, বা সংবাদ কর্মীরা ওসি সোহরাওয়ার্দীকে বিভিন্ন অপকর্ম, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তথ্য প্রদান করলে তিনি তা ঐ এলাকার গডফাদার/ বড়ভাইদের জানিয়ে দিতেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমনই এক ঘটনায় শিকার রাজশাহীর আইকন নিউজের সাংবাদিক নাজমুল হোসেন এবং রাজশাহীর সিনিয়র সাংবাদিক দৈনিক জবাবদিহির বিশেষ প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম জুলু এর জের ধরে এই দুই সাংবাদিককে স্থানীয় প্রভাবশালী বড় ভাইয়ের প্রাণনাশের হুমকির মুখে পরতে হয়। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করে আসছেন দৈনিক জবাবদিহি ও দৈনিক বর্তমান কথা। এর জের হিসাবে গত অক্টোবর মাসে ওসি সোহরাওয়ার্দির ভাড়াটিয়া ছিনতাই ও কিশোর গ্যাং বাহিনীরা হত্যার হুমকি দেন। এই ঘটনায় রাজশাহী বোয়ালিয়া মডেল থানায় সাংবাদিক মো: নজরুল ইসলাম জুলু ২২ অক্টোবর একটি জিডি করেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ও গ্রেফতারের দাবীতে ৩২ জন সাংবাদিক বিবৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আসামীদের গ্রফতারে কোন পদক্ষেপ নেননি ওসি সোহরাওয়ার্দী।
তার ঘুষ বাণিজ্য ও বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে পুলিশের উর্ধতন মহলে অনেক অভিযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। নগরীর উপশহর এলাকার সোহেল নামের একজন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী খবর২৪ঘন্টাকে বলেন, তার ব্যবসার পার্টনার চলতি বছরের ২২ফেব্রুয়ারী, ১৮ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে নেয়।
সোহেল জানান এই বিষয়ে সাহায্যের জন্য তিনি বোয়ালিয়া থানা ওসি সোহরাওয়ার্দীর কাছে যান তিনি ওসি সোহরাওয়ার্দী কে পুরো ঘটনা খুলে বলেন, এবং প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র যেমন- চেক, স্ট্যাম্প পেপার উনাকে দেখান। ওসি সোহরাওয়ার্দী তড়িঘড়ি করে তার অভিযোগ গ্রহণ করেন এবং আত্মসাৎ হয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধারে আস্বস্ত করেন। সোহেল আরও বলেন, "পরবর্তীতে ২৩শে ফেব্রুয়ারী ওসি সোহরাওয়ার্দী সাহেব আমাকে থানায় ডেকে পাঠান এবং টাকা উদ্ধারের বরাদ দিয়ে থানার বিভিন্ন আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ সুকৌশলে ঘুষ নেন।"
ব্যবসায়ী সোহেল দৈনিক বর্তমান কথাকে অভিযোগ করে বলেন, "মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানার জন্য ২৬ফেব্রুয়ারী রাতে আমি বোয়ালিয়া থানায় যায় এবং দেখি ওসি সাহেব আমার মামলার বিবাদী কে নিয়ে বসে উনার রুমে নাস্তা করছেন। সে সময় ওসি সাহেবের সাথে আমার বাকবিতণ্ডা হয় এবং পরবর্তীতে তিনি আমার মামলার বিভিন্ন ডকুমেন্টস গায়েব করে দেন।"
এছাড়াও অভিযোগ উঠে চলতি বছরের ২২শে জুন বোয়ালিয়া থানাধীন খুলিপাড়া এলাকায় কিশোর গ্যাং আজিজ-মজিদ ও রবিন বাহিনীর অতর্কিত ও নৃশংস হামলায় অত্র এলাকার আলতাব, মনা ও মুকুল গুরুতর আহত হোন। উক্ত হামলায় আহত আলতাবের ডান হাতের কব্জি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় বোয়ালিয়া থানায় আহত আলতাবের ছেলে মো: সাকিব বাদি হয়ে ২৫ জন কে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং ১৫।
প্রকাশ্যে দিবালোকে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বোয়ালিয়া থানায় নিকটবর্তী এলাকায় এমন লোমহর্ষক ঘটনা সারাদেশে আলোড়ন তৈরি করে। উক্ত ঘটনার ভুক্তভোগী মনা, মুকুল ও আলতাবের পরিবার জবাবদিহির কাছে অভিযোগ করে বলেন বোয়ালিয়া থানা আসামীদের ধরতে যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা পালন করে নি। আহত মনা বলেন, "আমরা ওসি সাহেবকে অনেকবার বলেছিলাম আজিজ বাহিনীর কাছে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র রয়েছে। কিন্তু তিনি অস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপারে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেন নি।
আসামীরা নির্ভয়ে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো। আমাদের পরিবার ওসি সাহেবকে বিষয়টি জানায় কিন্তু তারপরও আসামীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি কার্যকর পদক্ষেপ নেন নি।" আহত মনার চাচা ও আরেক ভিক্টিম কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া আলতাব বলেন, "আজিজ -রবিনের কিশোর গ্যাং ক্রমাগত মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আমাদেরকে হুমকি দিয়ে আসছে।
আমরা নিরাপত্তা চেয়ে বোয়ালিয়া থানায় ২টি জিডি দায়ের করি। যাহার জিডি নং ৫৫২ বাদি আমি এবং অপরটির জিডি নং ৯৩০ বাদি আমার ভাতিজা আহত মনা।" আহত মনা আরও অভিযোগ করে বলেন," ঘটনার দিন আজিজ ও তার বাহিনী বেলদার পাড়া মোড়ে আমার চাচাতো ভাই মুকুল কে হত্যার উদ্দেশ্য আঘাত করে। যার ভিডিও ফুটেজ বেলদারপাড়া সুমনের ফুচকার দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়। কিন্তু ওসি সোহরাওয়ার্দী সাহেব সুমনের দোকান থেকে মামলার অন্যতম আলামত ভিডিও ফুটেজের ডিভাইস তুলে নিয়ে চলে যান।"
আহতরা অভিযোগ করে বলেন, ওসি সোহরাওয়ার্দী এর সাথে কিশোর গ্যাং আজিজ বাহিনীর সখ্যতা আছে। আজিজ অত্র এলাকার একজন মাদক ব্যবসায়ী। আজিজের সাথে সুসম্পর্ক থাকার জন্য ওসি সাহেব আমাদের কোনো অভিযোগ আমলে নেন না।
তবে আজিজ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সাথে সখ্যতার বিষয়টি অস্বীকার করেন ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন। উক্ত মামলার বাদি ও আহত আলতাবের ছেলে মো: সাকিব কেও মামলা তুলে নেওয়ার জন্য সন্ত্রাসীরা প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। সন্ত্রাসী বাহিনী আজিজ গ্রুপ আহত আলতাবের বাড়িও ভাঙচুর করে। বারবার নিরাপত্তা চেয়ে না পেয়ে অবশেষে ভুক্তভোগী সাকিব ৪ জুলাই ওসি সোহরাওয়ার্দী এর বিরুদ্ধে পুলিশ কমিশনার জনাব বিপ্লব বিজয় তালুকদাররের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। আহত মনা ইসলাম জানায়,
গত ১০ নভেম্বর রাতে আজিজ বাহিনী তাকে অপহরণের উদ্দেশ্য তুলে নেওয়ার অপচেষ্টা করে। এ সময় আজিজ বাহিনী তাকে মারধর করে ও মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দেয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা ৩টি ফাঁকা স্ট্যাম্প পেপারে তার স্বাক্ষর নিয়ে নেয় বলেও জানান তিনি। উক্ত ঘটনায় মনার বড় ভাই রনি বাদি হয়ে বোয়ালিয়া থানায় মামলা দায়ের করার জন্য অভিযোগ করেন। কিন্তু, নানান অজুহাতে ওসি সোহরাওয়ার্দী উক্ত অভিযোগ গ্রহণ করেন নি। পরবর্তীতে চিকিৎসা শেষে আহত মনা ইসলাম ১৩ নভেম্বর ওসি সোহরাওয়ার্দীর সমস্ত অন্যায়, অসহযোগিতার বিরুদ্ধে পুলিশ কমিশনার জনাব বিজয় কুমার তালুকদার এর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে জনাব বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন," পুরো বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য আমি উপ-পুলিশ কমিশনার বোয়ালিয়া জোনকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি।" অনুসন্ধান জানা গেছে আরএমপি সদরদপ্ত স্মারকনং-৪৪.০১.০০০০.৯৮৮.৫৭.০১৯.২৩/১৬১২, তারিখ ১৬/১১/২০২৩খ্রী: মূলে ভিক্টিম আলতাব হোসেন, মনা, মুকুল, বাদি মো: সাকিব, প্রত্যক্ষ সাক্ষী শান্ত, ফুচকা দোকানদার সুমন, ও রনির জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে ২১ নভেম্বর, ২০২৩। তদন্তে জবানবন্দির বিষয়টি দৈনিক বর্তমান কথাকে নিশ্চিত করেছেন বোয়ালিয়া জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব হাফিজ হোসেন। এ সংক্রান্ত ডকুমেন্টস দৈনিক বর্তমান কথার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী মেট্রোপলিটনের ৩ থানার ওসি দৈনিক বর্তমান কথাকে বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন কালীন সময় থেকেই ওসি সোহরাওয়ার্দী অন্যান্য থানার ওসিদের উপর কর্তৃত্ব স্থাপনের চেষ্টা করতেন। কথায় কথায় তিনি মেয়র ও এক প্রতিমন্ত্রীর কাছের লোক দাবি করে অন্যান্য থানায় ওসিদের কর্মকান্ডে হস্তক্ষেপ করেন। তবে বর্তমান পুলিশ কমিশনার রাজশাহী মেট্রোপলিটনে যোগদানের পর থেক্র ওসি সোহরাওয়ার্দীর হস্তক্ষেপ ও মাতবরি অনেকটাই কমেছে বলে তারা জানান।
এ দিকে আসন্ন দ্বাদশ সাংসদ নির্বাচন কে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের আদেশ অনুযায়ী সারাদেশের বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদলি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিতর্কিত ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন কে পবা থানায় বদলির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ওসি সোহরাওয়ার্দী ১১ডিসেম্বর পবা থানায় যোগাদান করেন। বোয়ালয়া থানায় তার স্থলাভিষিক্ত হোন হুমায়ুন কবীর। এর পূর্বে ওসি হুমায়ুন কবীর নওগাঁর সাপাহার থানার ওসি হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।