রাজশাহীতে ক্রমশ ছিনতাই ও বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যাচ্ছে না ছিনতাই চক্র কে। পুলিশের নানান কার্যক্রম ও তদারকির পরও কেন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে রাজশাহী মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তা নিয়ে জনমনে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ। দিনদিন শান্তশিষ্ট রাজশাহী মহানগরী যেন ছিনতাইকারী ও মাদক কারবারিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে। অনেকের ধারণা আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব ও ক্ষমতাশীল দের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে অপরাধীরা ধরা ছোয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। রাজশাহী মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিনদিন অবনতি সাধারণ জনগণের মনে ভীতি সৃষ্টি করেছে। প্রায় প্রতিদিনই মহানগরীর কোনো না কোনো এলাকায় ছিনতাই, খুবের ঘটনা ঘটছে। গত ৫ অক্টোবরে বায়ার মোড় ও মহানগরীর মহিলা টেনিস কমপ্লেক্স এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীরা দুইজনই নারী।
আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, অসাধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও গডফাদার দের ছত্রছায়ায় থাকার জন্য ছিনতাইকারী চক্র ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে প্রশাসন ব্যর্থ হচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। মহানগরীতে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস প্রবণতার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কিশোর অপরাধ। মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তান্ডবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রায় লণ্ডভণ্ড হতে চলেছে। পুলিশের কাছে ছিনতাইকারী গ্রুপের বিরুদ্ধে যাবতীয় তথ্য প্রমাণ থাকলেও কোনো এক অজানা কারণে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না।
মাঝেমধ্যে চুনোপুঁটিদের ধরলেও মূল হোতারা ধরা ছোয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। রাজশাহী মহানগরীর শীর্ষ ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ী জামিলুর রহমান দীপ্ত ও খন্দকার রিয়াসাত ইসলাম প্রান্ত'র দৌরাত্মে নগরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। দীপ্ত ও প্রান্ত তাদের দলবল নিয়ে মহানগরীর বিভিন্ন একাধিক সূত্রে জানা গেছে তারা মহানগরীর সিএন্ডবি মোড়,অলকার মোড়, নিউমার্কেট, হেতেম খা, হোসেনীগঞ্জ, কলাবাগান সহ বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবা বিক্রয় করে ও ছিনতাই করে। তারা দুজনেই রাজশাহী মহানগরীর শীর্ষ ছিনতাইকারী। অভিযোগ উঠেছে এরা মহানগরীতে মোটর সাইকেলযোগে ছিনতাই করে ও ইয়াবা বিক্রয় করে। বোয়ালিয়া থানা ও ডিবি সূত্রে জানা যায় এদের বিরুদ্ধে ছিনতাই ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে । পুলিশের কাছে এদের বিরুদ্ধে একাধিক তথ্য প্রমাণ থাকলেও এরা ছোয়ার বাইরেই রয়ে যায়।
রাজনৈতিক দল গুলোর ছত্রছায়ায় এরা আরো নির্ভীক ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ছিনতাই সম্রাট দীপ্ত ও প্রান্ত উভয়ের বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন এলাকায়। জমিউর রহমান দীপ্ত মহানগরীর ষষ্ঠীতলা এলকার আব্দুল জব্বারের ছেলে এবং প্রান্ত বোয়ালিয়া থানাধীন হোসেনীগঞ্জ এলাকার সায়রুকের ছেলে। অভিযোগ উঠেছে দীপ্ত ও প্রান্ত এই গ্রুপটি রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সাথে সেল্ফি তুলে নিজেদের সাথে তাদের সখ্যতা জাহির করে। এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্রান্ত ও দীপ্ত এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
অভিযোগ উঠেছে এরা বোয়ালিয়া থানা পুলিশ কে বিপুল অংকের মাসোয়ারা দিয়ে থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা
জানান যে, দীপ্ত ও প্রান্ত প্রশাসন কে ম্যানেজ করে জেল থেকে বের হয়ে পুন:রায় মাদক ব্যবসা শুরু করে। এলাকার উঠতি বয়সী তরুণদের মাদকের লোভ দেখিয়ে এরা পাড়া মহল্লায় ছিনতাই ও মাদক ব্যবসা করে। বিভিন্ন পাড়া মহল্লা প্রান্ত ও দীপ্ত এর ছিনতাই ও মাদক ব্যবসা থাকলেও এগুলো বন্ধে কোনো ফলপ্রসূ কার্যক্রম গ্রহণ করতে দেখা যায় না। যারা এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে তারাই কালো টাকার কাছে বিক্রি হয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে। এলাকার মানুষের অভিযোগ প্রান্ত ও দীপ্ত এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তারাই উল্টো হুমকি দেয়।
তাদের ভাষ্যমতে ",ডিবি পুলিশ, সবাইকে পকেটে রেখে চলি। বেশি কথা বললে মাদক দিয়ে ধরিয়ে দিব" তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মহানগর বাসী ভয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। রাজনৈতিক দলের সাপোর্টে ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ এর অভাবে প্রান্ত-দীপ্ত দের মতো দাগী অপরাধীরা দেদারসে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং দিনদিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এদিকে শুধু ছিনতাইকারী চক্র নয় দমানো যাচ্ছে না কিশোর গ্যাং অপরাধও। তারা পুলিশ কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ত্রাস ছড়িয়েই যাচ্ছে।
মহানগরীর খুলিপাড়া এলাকার কিশোর গ্যাং লীডার ও মাদক ব্যবসায়ী আজিজ এর কিশোর গ্যাং ২জন কে নির্মমভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে এবং একজনের হাতের কব্জি কেটে নেয়। সম্প্রতি এই গ্যাংযের সদস্যরা জামিনে মুক্ত হয়ে উক্ত এলাকায় পুনরায় ত্রাস সৃষ্টি করছে। তারা পুনরায় এলাকায় অস্ত্রসজ্জিত হয়ে পাড়া-মহল্লায় টহল দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
তারা কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া আহত আলতাব এর ছেলে ও মামলার বাদী সাকিব কে প্রাণে মারার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। আজিজ গ্যাং আহত আলতাবের বাড়ি ভাঙচুর করে। এই ঘটনায় ১২ই অক্টোবর বোয়ালিয়া থানায় ১টি মামলা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। রাজশাহীতে " গডফাদার" দের তদবির ও ছত্রছায়ার জন্য ও কতিপয় অসাধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য অপরাধ দমনে পুলিশ ব্যর্থ হচ্ছে।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বোয়ালিয়া মডেল থানা সোহরাওয়ার্দী এই চক্রটির সাথে সখ্যতা রয়েছে।
কারণ তিনি এই এলাকার সন্তান এবং লেখাপড়া এখানেই। যার ফলে আমাদেরই ভালো কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এমন অভিযোগ অস্বীকার করে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বোয়ালিয়া মডেল থানা সোহরাওয়ার্দী বলেন, এদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। আমি কাজ করতে চাই। মাঠ পর্যাযয়ের আরএমপিতে ৩০/৪০ পুলিশ কর্মকর্তার সাথে এই চক্রটির সখ্যতা রয়েছে। যার ফলে এদের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে আরএমপির মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জামিরুল ইসলাম এর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিয়ে রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জ/ন