----- লামা বন বিভাগের বমুবিটের আওতাধীন সংরক্ষিত ভূমিতে তামাকপাতা চাষের প্রস্তুতি চলছে। বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড পুকুরিয়াখোলা নামক স্থানে বমুখালের পাড়ে মোজাম্মেল নামের এক কৃষক তামাকপাতার নার্সারি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানাগেছে, সাবেক রিজার্ভ হেডম্যান আব্দুস ছালাম এর বড় স্ত্রীর বসত ঘর আছে সেখানে। আব্দুস ছালাম ২য় স্ত্রী সন্তানাদি নিয়ে কাছাকাছি আরেক জায়গায় বসবাস করছেন। পূর্বের বসত ঘরে তার বড় স্ত্রী ছকিনা বেগম সন্তানাদি নিয়ে বসবাসরত আছেন। রিজার্ভের ওই অংশে বমুখালের পাড়ে দীর্ঘকাল ধরে বসত বাড়ির পাশে এক একর জমি ভোগ দখলে আছে তারা। প্রাক্তন রিজার্ভ হেডম্যান তার বড় স্ত্রী ছকিনা বেগমকে সেখান থেকে ৪০ শতাংশ জমি বিগত ৫ জুন/২২ সালে স্থানীয় দলিলে ৫ লাখ টাকায় দখল হস্তান্তর করেন। পিতার কাছ থেকে জমিটি বার্ষিক লাগিয়াত নিয়ে চাষ করে জীবীকা নির্বাহ করতেন বড় ছেলে ভূমিহীন খায়রুল আমিন। জানাগেছে, বড় স্ত্রী ও সেই সংসারের সন্তানাদির সাথে আব্দুস ছালামের বনা মিল নেই বহু বছর ধরে। এই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর বৈশাখ মাসে জমিটি সন্তানের কাছে লাগিয়াত না দিয়ে, ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে মোজাম্মেলের নিকট লাগিয়াত করেন। এদিকে খায়রুল আমিনের পরিবার খালে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দিয়ে মোজাম্মেল পরিবারটির বেশ কিছু কলাগাছ কেটে ফেলেছে। খায়রুল আমিন আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে মোজাম্মেলের নিকট জমিটি স্থায়ীভাবে দখল বিক্রি করে দিতে পারে তার বাবা। এর ফলে সে তার বৃদ্ধ মা ও পরিবার পরিজনের জীবীকার সামান্য অবলম্বন টুকুও হারানোর আশঙ্কা করছে। এছাড়া তার মায়ের দখল দলিলের ২০ শতাংশ জমি বেদখল হয়ে যাবে বলেও শঙ্কা বোধ করছে। সে ও তার মা ৭০ ঊর্ধো বয়েসি ছখিনা বেগম আরো জানায়, আব্দুস ছালাম দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরের সন্তানদের ইন্ধনে তাদেরকে সকল অধিকার থেকে একে একে বঞ্চিত করে চলছে। আব্দুস ছালাম ২য় স্ত্রীর সে ঘরের সন্তানাদি নিয়ে পাকা বাড়িতে বসবাস করছেন। তার আরো ২৩ কানি সম্পত্তি রয়েছে। সেগুলো থেকে সম্পুর্নরুপে বঞ্চিত করে রেখেছে, বড় স্ত্রী ও সে সংসারের সন্তানদেরকে। খায়রুল আমিন জানান, পিতা আব্দুস ছালাম বর্তমানে সর্বশেষ এই জমিটুকু অনত্র বিক্রি করে তাদেরকে নিঃস্ব করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। তারা অভিযোগ করেন, এসব বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জেনেও তাদেরকে ন্যয় সঙ্গতভাবে সহায়তা দিচ্ছেন না। এ বিষয়ে মুঠো ফোনে কথা হয়, বর্তমান চাষা মোজাম্মেল এর সাথে। জমির পূর্বের চাষা খায়রুল আমিন ও তার পিতার মধ্যে বিরোধপূর্ণ জমিটি জেনে শুনে মোজাম্মেল কেন লাগিয়াত নিলেন; এমন প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল ভুল স্বীকার করে জানান, "আমি ৪৫ হাজার টাকা খাজনা দিয়ে জমি নিয়েছিলাম। খায়রুল আমিন সেই টাকা ফেরত দিয়ে তার বাবার জমিতে নিজের চাষ বহাল রাখার কথা ছিলো। কিন্তু সে আমাকে তখন ৩৫ হাজার টাকা দেয়। বাকি দশ হাজার টাকা না দেয়ায় আমি ওই ৩৫ হাজার টাকা স্থানীয় মেম্বারের কাছে জমা দিয়ে রাখি। এর পর আমি টাকা না পেয়ে জমিতে চাষ কার্যক্রম চালু করেছি"। এই বিষয়ে সম্প্রতি নিয়ে বমুবিলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদে বৈঠক হয়। মুঠোফোনে জানতে চাইলে পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, তাদের বাপ ছেলের মধ্যে বনা মিল নেই। আব্দুস ছালামকে তার ছেলে বিগত দিনে জমির বার্ষিক খাজনা হিসেবে যে টাকা দিতো, তার দ্বিগুন টাকা নিয়ে এবছর জমিটি স্থানীয় চাষি মোজাম্মেলকে চাষ করতে দেয়। যেহেতু মোজাম্মেল এবছর জমিতে চাষের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে, সেহেতু পরের বছর থেকে ওই জমি আব্দুস ছালাম তার ছেলে খায়রুল আমিনকে দিতে হবে; এরকম সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম"। চেয়ারম্যান আরো জানান, "বর্তমানে খায়রুল আমিন কিছু মানুষ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পরিষদের রায়কে অগ্রাহ্য করার ব্যার্থ চেষ্টা করে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে"। এদিকে সংরক্ষিত ভূমিতে তামাক চাষ নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও মোজাম্মেল সেখানে তামাক চাষের জন্য নার্সারি করেছেন। এ ব্যাপারে লামা বনবিভাগের বমুবিট কর্মকর্তা অঞ্জন বাবুকে জানানো হলে, শুক্রুবার দুপুরে তিনি সরেজমিন গিয়ে সেখানে তামাকপাতার নার্সারি দেখতে পান। বিট কর্মকর্তা জানান, নার্সারি নষ্ট করে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে শাক সবজির চাষ নষ্ট করা যাবেনা। খায়রুল আমিনের খালে যাওয়ার পথ উদ্ধার করে দেয়া হবে।