একসময় অন্য কোনো সফল না হওয়ায় বাধ্য হয়ে চাষ করা পান এখন গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করছে পান চাষ । লাভজনক অর্থকারী ফসল হওয়ায় পান চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। সংকট কাটিয়ে সম্ভাবনার হাসি ফুটেছে কৃষকের চোখে-মুখে।
রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের পান চাষিরা বলছেন, পান চাষে পানি কম লাগে। কিন্তু অন্যান্য পরিচর্যা খরচ বেশি। তবে আশার দিক হলো, পানের দাম ভালো। এক বিঘা পান থাকলে জীবিকা নিয়ে আর ভাবতে হয় না। অন্য ফসলের মতো হুট করে দাম বৃদ্ধি পাওয়া বা কমার মতো বিষয়গুলোও এতোটা প্রকট না। এ কারণে রাজশাহীতে প্রতিবছরই নতুন নতুন পান বরজ গড়ে উঠছে। এখন অনেকেই বাণিজ্যিকভাবেও পান চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩৫ হেক্টর জমিতে পানের চাষাবাদ বেড়েছে। মোহনপুর, বাগমারা ও দুর্গাপুরে সবচেয়ে বেশি পান চাষ হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের পানের চাষ হয়েছিল ৪ হাজার ৩৬১ হেক্টর জমিতে। ৩৭ হাজার ৯৩২ জন কৃষক এই পান চাষ করেছিলেন। পানের বরজ ছিল ৩৮ হাজার ৯০৬টি। আর চলতি বছরে পানের চাষ হয়েছে ৪ হাজার ৪৯৬ হেক্টর জমিতে। ৩৮ হাজার ৯০০ জন কৃষক এবার পান চাষ করেছেন। পানের বরজ রয়েছে মোট ৩৯ হাজার ৬৭৪টি।
পানের এই অপার সম্ভাবনাকে বিবেচনায় নিয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রাজশাহীতে একটি ‘পান গবেষণাকেন্দ্র’ তৈরির প্রস্তাবনাও পাঠিয়েছে। যা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে বলে আশাবাদী কৃষি দফতর।
পান চাষে মোহনপুর উপজেলার সর্বত্রই সুনাম । এখানকার উৎপাদিত পান বাজারজাত করতে উপজেলার মৌগাছি হাট, একদিলতলা হাট, পাকুড়িয়া হাট, কেশরহাট, মহব্বতপুর হাট, বাকশিমইল হাট, ধুরইল হাটসহ অন্তত ১০টি স্থানে প্রতিদিনই পানের বেচাকেনা হয়। আর এসব হাটে পান কিনতে আসেন ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, নওগাঁ, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, শেরপুর, জামালপুর, চাঁপাইনবাববগঞ্জ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার কেশরহাট পৌরসভা এলাকার কৃষক পলাশ বলেন, পান চাষ আমাদের বংশীয় ঐতিহ্য। বহুকাল থেকে আমরা পান চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমার দাদার পরে বাবা পান চাষ করেছেন। আমিও দীর্ঘ ২০ বছর ধরে পানের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। জমি ভালো থাকলে এটি একটি লাভজনক এবং জনপ্রিয় চাষাবাদ। ১০ কাঠা জমিতে পান বরজ থাকলে ৩ সদস্যের একটি পরিবার নিমিষেই চলবে।
নওগাঁ হাটে আসা পান কিনতে প্রতি হাটবারেই আসেন ব্যবসায়ী আবদুল মালেক। তিনি জানান, মোহনপুরের কেশরহাট ও একদিলতলা হাটের কৃষকদের থেকে পান কিনে নওগাঁর বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করেন। তিনি শনিবার ও বুধবারে দুই হাট মিলে প্রায় ১ লাখ টাকার পান কিনে নিয়ে যান। বছরে তিনি প্রায় অর্ধকোটি টাকার পান এই হাট থেকে কিনে নিয়ে যান।
মোহনপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোস্তাকিমা খাতুন বলেন, মোহনপুর পানের একটি সম্ভাবনাময় এলাকা। এ সুযোগ কাজে লাগাতে সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষকদের সবধরনের রোগ প্রতিরোধে আমাদের কৃষি সেবা অব্যাহত রয়েছে। কৃষি বিভাগের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রায় ৩ মাস আগে মন্ত্রণালয় থেকে মোহনপুরে পান গবেষণাগার স্থাপনের জন্য স্থান পরিদর্শন করে গেছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীর গ্রামীণ অর্থনীতিতে পানের গুরুত্ব বাড়ছে। মাঝে মাঝে বিভিন্ন রোগে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। এ কারণে এ অঞ্চলে পান গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া। মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রতিনিধি দল মোহনপুরের মৌগাছি এলাকাকে পছন্দ করে গেছেন। এখন পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে পান গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হবে।
জ/ন