রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর মো.নুরুজ্জামানকে ২৫ আগস্ট দুপুরে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন তার স্বজনরা।
এরপর তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। পরে ডেঙ্গু ওয়ার্ড থেকে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত পাঁচ ডেঙ্গুরোগীর মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে এখন পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৮৫৯ জন। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে (রাজশাহীর) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪২৮ জন রোগী। বাকিরা রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। মোট ভর্তি রোগীর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭৮০ জন। বর্তমানে আরও ৭৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা এখনো ক্রমবর্ধমান। থেমে নেই মৃত্যুও। অথচ আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) পরিচ্ছন্নতা বিভাগের অবহেলা ও স্বেচ্ছাচারিতার অবসান হচ্ছেই না।
জানা গেছে রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকেই। পাড়া মহল্লাতে উদ্যোগ নেই মশা নিধনের। রামেক হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডগুলো ঘুরে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত প্রত্যেকটি রোগীই মশারির নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টা মশারির নিচে থেকেই চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। কেননা মশারির বাইরেই মশার উপদ্রব। ডেঙ্গু প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুরো হাসপাতালকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করলেও সন্ধ্যার পর মশার তীব্র উপদ্রব থাকছে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতালের ভেতরের পরিবেশ পরিষ্কার থাকলেও বাইরের ড্রেন ও আশপাশের স্থাপনাগুলোর পরিবেশ ভালো না। এ কারণে মশার উপদ্রব কমছে না।
হাসপাতালের বাইরের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ড্রেনগুলো মশা উৎপাদনের জন্য খুবই উর্বর জায়গা। মেডিকেলে কলেজের হোস্টেল ও আশেপাশের ঝোঁপঝাড়ও কাটা হয়নি। সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে থাকা পানিতে মশা জন্ম নিচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালের সামনেই রাজশাহী বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার। সেখানেও বেলাল দশা।
বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার ঘুরে দেখা যায়, গ্রন্থাগারের অধিকাংশ জায়গা এখন পরিত্যক্ত। যেখানে দিনের বেলাতেও মশার মেলা বসছে। এতে একদিকে যেমন এখানে পড়াশোনা করতে আসা শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে, তেমনি অনিরাপদ করছে হাসপাতাল এলাকাকেও।
গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ বলছে, গ্রন্থাগারে পরিচ্ছন্নতার জন্য জনবল নেই। এ কারণে তারা রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে একাধিকবার ঝোঁপ-ঝাড় পরিষ্কারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
হাসপাতালের প্রধান ফটক ও বহির্বিভাগের সামনের ড্রেন যে শুধু মশার উর্বর জায়গা তাই নয়; জনদুর্ভোগেরও কারণ। ড্রেন ভর্তি হয়ে উপচে পড়ছে ময়লা পানি। পাশ দিয়ে হেঁটে চলাচলেও দুর্গন্ধসহ সন্ধ্যা হলেই মশার অসহ্য যন্ত্রণার মুখে পড়ছেন সেবাপ্রার্থীসহ নগরবাসী। অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের দোকানগুলোতেও মশার উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এ বিষয়ে কারও কোনো পদক্ষেপ নেই।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের সহকারী পরিচালক মো. মাসুদ রানা বলেন, এখানে মশার উপদ্রব বেশি বিষয়টি সত্য। মশার যন্ত্রণার মধ্যে আমরাও রয়েছি। কিন্তু এগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য আমাদের নিজস্ব ফান্ড বা জনবল কোনটিই নেই। রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে বারবার অনুরোধসহ চিঠি দেওয়ার পরও তারা কোনো সাড়া দেয়নি। এখন আমরা কী করতে পারি।
এ বিষয়ে রাসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মামুন ডলার বলেন,কোন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব এরিয়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ওই প্রতিষ্ঠানকেই করতে হবে। সিটি করপোরেশন করে দেবে না। তবে এর বাইরে কেউ সহযোগিতা চাইলে তারা করবেন।
জ/ন