কালীগঞ্জে বেনজীরের ৪ দলিল জব্দ, জায়গা প্রায় ২০০ বিঘা
গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের নামে প্রায় ২০০ বিঘার প্রকল্পের মধ্যে চারটি দলিল জব্দ করেছে কালীগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিস। আজ বুধবার সকাল ১১টায় কালীগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসের প্রধান সহকারী নুরু মিয়া গণমাধ্যমকে এই সংবাদ নিশ্চিত করেন।
জব্দকৃত দলিল নম্বরগুলো হলো- ৮৩৬০/২০১৬, ১৮২৫/২০১৭, ২০৩৮/২০১৭, ১৯৭৩/১৭।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়নের চান্দখোলা মৌজায় ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময় সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ বিভিন্ন নামে প্রায় ২০০ বিঘা ফসলি জমি ক্রয় করেন।
এসব জমির ৩৫টি নামজারি ও জমাভাগ (খারিজ) করা হয়। ৩৫টি নামজারির মধ্যে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মির্জা ও মেয়ে ফারহীন রিশতার নামে রয়েছে ছয়টি নামজারি। ছয়টি নামজারির নথি নম্বর ৪৬৯/১৬-১৭ থেকে ৪৭৪/১৬-১৭, তাং ১৩/০৪/২০১৭।
তার বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের নামে বাকি ২৯টি জমাভাগ (খারিজ) পাশাপাশি সময়ে করা হয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, একই ব্যক্তি ৩৫টি জামা ভাগ করার জন্য এসেছিলেন। যিনি এসেছিলেন তিনি তুমুলিয়া ইউনিয়নের একজন জমির দালাল বলে জানালেও তার নাম-পরিচয় প্রকাশ করেননি। স্থানীয়রা বলছেন, প্রকল্প এলাকার একজন প্রভাবশালী জমির দালাল জনৈক মোমেন মিয়া প্রায় ২০০ বিঘা জমি বেনজীর আহমেদকে মধ্যস্থতা করে ক্রয় করে দিয়েছেন।
মোমেন মিয়া জমির মালিকদের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা বিঘা ক্রয় করে বেনজীরের কাছে ২০ লাখ টাকা বিঘা বিক্রয় করেছেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন জমি বিক্রেতা। তবে তারা তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে অপারগতা জানান।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মোমেন মিয়ার মোবাইলে ফোন করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। মোমেন মিয়ার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেখা যায়, বেনজীর আহমেদের পক্ষে বিভিন্ন সময়ে করা অসংখ্য পোস্ট। বেনজীর আহমেদের বক্তব্যও তার ফেসবুক আইডি থেকে প্রচার করা হয়েছে।
কিছুদিন আগে সরেজমিনে টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের তুমুলিয়া মিশন থেকে মানিকপুর রোডে বাঘের দিয়া রাস্তা হয়ে চান্দখোলা-নাগরি রাস্তার বেতুয়ারটেক গ্রামে গিয়ে এই প্রকল্পের সন্ধান মিলে। কালীগঞ্জের তুমুলিয়া ইউনিয়নে চান্দখোলা মৌজায় বেতুয়ারটেক গ্রামে বিশাল ফসলের মাঠের চারদিকে খুঁটি পুঁতে রাখা হয়েছে। খুঁটিগুলোর পারস্পরিক কোনো সংযোগ নেই। তার বা ইটের কোনো প্রাচীরও নেই।
প্রকল্পের ফসলি জমির পাশ দিয়ে একটি রাস্তা নতুন তৈরি করা হয়েছে। বেতুয়ারটেক বেনজীরের প্রকল্প এলাকা হয়ে চান্দখোলা থেকে নাগরী যাওয়ার এটি নতুন কাঁচা রাস্তা। এই রাস্তার পাশেই বেনজীরের প্রকল্প।
বেনজীর, তার স্ত্রী ও এক মেয়ের নামে ছয়টি নামজারি ও জমাভাগের (খারিজ) কাগজপত্র পাওয়া গেলেও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাবেক আইজি বেনজীর সাহেব এখানে ২০০ বিঘারও বেশি জমি কিনেছেন। এটি বেনজীরের প্রকল্প হিসেবেই সবাই জানেন।
প্রকল্প এলাকার এক মুদি দোকানদার বলেন, এটা সাবেক আইজিপি বেনজীর সাহেবের প্রকল্প। জমি হবে ২০০ বিঘার ওপরে। তবে এই প্রকল্পে প্রায়ই কালার গ্লাসের দামি গাড়ি আসে। বেনজীর সাহেব এসেছেন কি না জানি না। তাকে কখনো সামনাসামনি দেখিনি।
বেতুয়ারটেক এলাকার এক প্রবীণ মুরব্বি বলেন, নাম দিয়েন না। দিলে উপায় নাই। বেনজীর সাহেবের এত সম্পদ কেন? এত সম্পদ দিয়ে কী হবে? মরলে তো মাটিই খাবে। আমার গ্রামেও কয়েক শ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি ও তার লোকজন।
একটি গোপন সূত্রে জানা যায়, একটি গণমাধ্যমে বেনজীরের অবৈধ সম্পদের খবর প্রকাশের পর ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে বেনজীর আহমেদ তার কালীগঞ্জের বেতুয়ারটেক প্রকল্পের জমি বিক্রি করেছেন বলে শোনা গেছে। তবে সামান্য জমি বিক্রি করে পুরো প্রকল্প বিক্রি করেছেন বলে সংবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
সূত্র বলছে, একটি পরিচিত গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এই জমি ক্রয় করেছে, যাদের কালীগঞ্জে আরো জমি আছে। তবে কতটুকু জমি বিক্রি হয়েছে, তার কোনো হিসাব সাবরেজিস্ট্রি অফিস দিতে পারেনি।