ইমারত পরিদর্শকের দায়িত্বে অবহেলায় চলছে অবৈধ ভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ — নিরাপত্তাহীন রাজধানী
- আপডেট: ০১:১১:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
- / ৭৯
নিজস্ব প্রতিবেদক : নকশা লঙ্ঘন করে গড়ে তোলা হচ্ছে তিনটি বহুতল ভবন। রাজউকের নীরবতা ও নজরদারির অভাবে অব্যাহত রয়েছে এসব অবৈধ নির্মাণকাজ, হুমকির মুখে শ্রমিক ও সাধারণ পথচারীরা।
🏢 ভবন-১:
📍 ঠিকানা: ৬০/২/এফ, টোনারটেক, ভাষানটেক, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা-১২০৬।
🔹 মালিক: মোঃ সাহাদাত হোসেন গং, কামারজুরী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর।
🔹 নির্মাতা: মোঃ বিল্লাল হোসেন, ভাষানটেক, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট।
🔹 স্থপতি: বিধান কুমার সাহা (IAB #S-062)।
🔹 প্রকৌশলী: ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আব্দুল মান্নান (BUET)।
🔹 নির্মাণের ধরণ: জি+৯ আবাসিক ভবন, জমির পরিমাণ ১৩ কাঠা।
🔹 নির্মাণকাল: শুরু ১৫-০৩-২০১৯, সম্ভাব্য সমাপ্তি ৩০-০৯-২০২৩।
🏢 ভবন-২:
📍 ঠিকানা: ৮৯/এ/১, ভাষানটেক, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা-১২০৬।
🔹 মালিক: শেখ শহীদুল ইসলাম গং, ৮৯/৫/১, ভাষানটেক।
🔹 নির্মাতা: মেসার্স মানিক এন্টারপ্রাইজ।
🔹 স্থপতি: এ. আর. মোঃ ফজলুল কাদের (FIAB-Q-004)।
🔹 প্রকৌশলী: ইঞ্জিনিয়ার মোঃ কিবরিয়া ইকবাল (MIEB-12243)।
🔹 নির্মাণের ধরণ: জি+৯ আবাসিক ভবন, জমির পরিমাণ ৭ কাঠা।
🔹 নির্মাণকাল: শুরু ১৬-১২-২০২০, সম্ভাব্য সমাপ্তি ১৬-১২-২০২৩।
🏢 ভবন-৩:
📍 ঠিকানা: দেওয়ানপাড়া, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা।
🔹 মালিক: আব্দুল ওহাব দেওয়ান।
🔹 নির্মাতা: আব্দুল ওহাব দেওয়ান।
🔹 স্থপতি: এস.এম আসাদুজ্জামান (RAJAUK Regi. No-A174)।
🔹 প্রকৌশলী: মাহাবুবুর রহমান খান (RAJAUK Regi. No-A174)।
🔹 নির্মাণের ধরণ: জি+৮ আবাসিক ভবন, প্রতি তলার আয়তন ৮৭.৬৩ বর্গ মিটার।
🔹 নির্মাণকাল: শুরু ০১-০৩-২০২৪, সম্ভাব্য সমাপ্তি ৩১-১২-২০২৭।
🚫 একই অনিয়ম তিন ভবনে:
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তিন ভবনেই নকশা লঙ্ঘন করে ভবনের চারপাশে অতিরিক্ত বারান্দা ও ছাদ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। নির্মাণস্থলে নেই নিরাপত্তা নেট বা গার্ড, শ্রমিকরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কাজ করছেন। পথচারীদের জন্যও ঝুঁকি রয়ে গেছে।
রাজউকের ইমারত পরিদর্শক (জোন ৩/১) সামিউল জানান, ভবনের মালিকদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তবে এখনো নকশা দাখিল করেননি তারা। অথরাইজ অফিসার মাহাব্বির রনি জানান, আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। সরেজমিনে অনুসন্ধানকালে অনেক চেষ্টা করেও ভবন মালিকের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি বিধায় তার কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
⚖️ আইন কী বলছে?
নিম্নোক্ত আইন অনুযায়ী এসব নির্মাণ বেআইনি:
১. ইমারত নির্মাণ আইন, ১৯৫২।
২. রাজউক আইন, ১৯৫৩।
৩. বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (BNBC), ২০২০।
৪. রাজউক ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ২০০৮।
৫. বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮)।
৬. রাজউকের সার্কুলার (০৭/০৯/২০১৯)।
❗ স্থানীয়দের অভিযোগ ও দাবি:
স্থানীয়রা জানান, রাজউকের পরিদর্শকরা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করলে এ অনিয়মের সুযোগ থাকতো না। তারা দাবি তুলেছেন:
তৎক্ষণাৎ নির্মাণ কাজ বন্ধ।
দায়ীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা।
তদন্ত কমিটি গঠন।
রাজউক কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা।
ডেভেলপারদের শাস্তি।
🏙️ নগর বিশেষজ্ঞদের মতামত:
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, এভাবে অনিয়ম চলতে থাকলে ঢাকার পরিকল্পিত নগরায়ণ মুখ থুবড়ে পড়বে। ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় নকশাবহির্ভূত ভবন প্রাণঘাতী ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
✅ এখনই প্রয়োজন শক্তিশালী তদারকি ও জবাবদিহি:
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবন মালিকদের পাশাপাশি রাজউকের ভেতরের দুর্নীতি, অবহেলা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা—এ অনিয়মের জন্য দায়ী।
শুধু নোটিশ দিয়ে দায়িত্ব শেষ নয়, এখনই দৃশ্যমান আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই — এই সংস্কৃতি বদলাতে না পারলে নগরীর ভবিষ্যৎ অন্ধকার।