মনোনয়নে কঠোর; তিন শর্তে প্রার্থী বাছাই করবে বিএনপি
- আপডেট: ১১:০৭:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
- / ১২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক, বর্তমান কথা
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জোরালো প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের পর নির্বাচনমুখী কার্যক্রমে গতি এনেছে দলটি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রার্থী বাছাইয়ে বিএনপি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং এরই মধ্যে কয়েক দফায় জরিপও সম্পন্ন করেছে। চলছে আরও কয়েকটি জরিপ। বিশেষভাবে যাচাই করা হচ্ছে ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের প্রার্থীদের বর্তমান অবস্থান ও জনগণের গ্রহণযোগ্যতা।
প্রার্থী নির্বাচনে তিনটি প্রধান মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে বিএনপি:
১. গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে ত্যাগী ভূমিকা,
২. ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সততা,
৩. নির্বাচনি এলাকায় জনপ্রিয়তা ও জনসম্পৃক্ততা।
বিএনপির হাইকমান্ড সূত্র জানিয়েছে, এবার মনোনয়নে তরুণ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে। তবে নবীন-প্রবীণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। তারেক রহমানের কাছে বিভিন্ন নেতার ‘আমলনামা’ ইতোমধ্যে সংরক্ষিত রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে বা মাঠপর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা নেই, তাদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
২০১৮ সালের নির্বাচনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার কারণে দলীয় বিভ্রান্তির যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তা এবার আর পুনরাবৃত্তি হবে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ স্পষ্ট করে বলেন, “এবার একক প্রার্থী দেওয়া হবে।”
বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার দায়িত্ব থাকবে দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের হাতে। জাতীয় স্থায়ী কমিটিই এই বোর্ড হিসেবে কাজ করবে। দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি ও জমা দেওয়ার কাজ শুরু হবে নির্বাচন কমিশনের তফশিল ঘোষণার পর।
স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, কিছু নির্বাচনি আসনে এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে, যাদের নাম এখন পর্যন্ত আলোচনায় আসেনি। আবার কিছু পরিচিত মুখ, এমনকি সিনিয়র নেতারাও বাদ পড়তে পারেন। দলের সিদ্ধান্ত হবে পুরোপুরি ত্যাগ, যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে আন্দোলনে পাশে থাকা দল ও জোটগুলোর জন্য আসন ছাড়ার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। ঢাকার কয়েকটি আসনও ছাড় দেওয়া হতে পারে। এসব বিষয়ে আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতা চলছে এবং মাঠপর্যায়ে সম্ভাব্য মিত্র প্রার্থীদের জনপ্রিয়তাও যাচাই করা হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, “বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি বিএনপি সব সময় নির্বাচনমুখী প্রস্তুতিই রাখে।” তিনি আরও বলেন, “দল প্রথমে তাদের মূল্যায়ন করবে যাদের জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে এবং যারা দুর্দিনে দলের পাশে ছিলেন।”
সব মিলিয়ে বলা যায়, বিএনপি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এবার সুপরিকল্পিত ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ত্যাগ, সততা, গ্রহণযোগ্যতা ও জনগণের প্রত্যাশাকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি হবে মনোনয়নের চূড়ান্ত তালিকা। তফশিল ঘোষণার পরই জানা যাবে, এই তালিকায় কতটা নতুনত্ব ও চমক অপেক্ষা করছে।