১১:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

ঈদুল আযহা উপলক্ষে বাড়ছে কামারদের ব্যস্ততা

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ০৪:৫৫:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
  • / ১৪১

কামার

বিশেষ প্রতিনিধি: মুজাহিদ খাঁন কাওছার

ঈদুল আযহার আগমনী বার্তা নিয়ে দেশের গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের কামারপট্টিগুলোতে ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি তৈরির ধুম। বছরজুড়ে অপেক্ষাকৃত নিস্তরঙ্গ সময় কাটানো কামাররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেক এলাকায় যেখানে বছরের অন্যান্য সময় চুল্লি নিভে থাকত, সেখানে এখন আগুনের লেলিহান শিখা আর লোহার ঠুকঠাক শব্দে মুখর চারপাশ।

সাভার ও আশুলিয়ার নামা বাজার, গেন্ডা, হেমায়েতপুর, পল্লী বিদ্যুৎ, পলাশবাড়ী, জিরাবো, জামগড়া, নরসিংহপুর, বলিভদ্র, কলমা, দোসাইদ, ঘোষবাগ ও নলাম ঘোড়া পীর মাজারসহ বিভিন্ন কামারপট্টিতে গিয়ে দেখা গেছে, অনেকেই ছুরি বা বঁটি ধার করাতে ভিড় করছেন। কেউ কেউ আবার অর্ডার দিচ্ছেন নতুন দা, চাপাতি বা ছুরি বানানোর জন্য। গড়ে প্রতিদিন ১৫-২০টি অর্ডার নিচ্ছেন একজন কামার।

আলম নামের এক অভিজ্ঞ কামার বলেন, “ঈদের আগে চাপ বেড়ে যায়। এখন প্রতিদিন গড়ে ১৫ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। লোহা, আগুন আর ঘামে আমাদের দিন কেটে যায়।”

তবে ব্যস্ততার মাঝেও আছে কিছু চ্যালেঞ্জ। লোহার দাম গত কয়েক বছরে ৩০–৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। সেইসঙ্গে কয়লা ও অন্যান্য কাঁচামালের সংকট বেড়েছে। কিন্তু প্রতিযোগিতার বাজারে দাম বাড়াতে পারছেন না কামাররা।

আশুলিয়া বাজারের কামার হাফিজুর রহমান জানান, “লোহার দাম বাড়লেও পুরোনো দামের আশেপাশেই জিনিস বিক্রি করতে হয়। অনেক সময় লাভ না হলেও পুরোনো ক্রেতার কথা ভেবে কাজ করি।”

এই সময়টায় অনেক ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা পণ্য নিয়ে ঘুরে বেড়ান গ্রামগঞ্জে। তারা অস্থায়ী দোকান বসিয়ে বিক্রি করেন দা-বঁটি। স্থানীয় মানুষও হাতের কাছে এসব পেয়ে সন্তুষ্ট। একজন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা বলেন, “দিনে ৪-৫ হাজার টাকার বিক্রি হয়। ঈদের আগে দুই সপ্তাহে ভালো আয় হয়।”

তবে কামাররা বলছেন, ঈদের ব্যস্ততা শুধু সাময়িক। সারা বছর ঠিকমতো আয় রোজগার হয় না। প্লাস্টিক বডির ছুরি, যান্ত্রিক যন্ত্রপাতি এবং বিদেশি আমদানি করা পণ্য বাজারে সহজলভ্য হয়ে পড়ায় দেশীয় কামারশিল্প হারাচ্ছে তার ঐতিহ্য।

চারাবাগ বাজারের তরুণ কামার শিপন বলেন, “আমাদের কাজ কঠিন, কিন্তু তেমন মর্যাদা বা সম্মান নেই। নতুন প্রজন্মও এই পেশায় আসতে চায় না। সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যদি প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা ও প্রযুক্তির সহায়তা দিত, তাহলে হয়তো কামারপেশা বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হতো।”

ঈদুল আযহার এই সময়ে দেশের হাজারো কামার পরিবার আবারও নতুন আশায় বুক বাঁধে। তারা জানেন, এই ক’দিনের ব্যস্ততা সাময়িক হলেও, এটি তাদের জীবনের রসদ জোগায়। প্রয়োজন শুধু রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও আধুনিকীকরণের ছোঁয়া—তাহলেই হয়তো এই শিল্প আবারো ফিরে পাবে তার প্রাচীন গৌরব।

Please Share This Post in Your Social Media

ঈদুল আযহা উপলক্ষে বাড়ছে কামারদের ব্যস্ততা

আপডেট: ০৪:৫৫:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
বিশেষ প্রতিনিধি: মুজাহিদ খাঁন কাওছার

ঈদুল আযহার আগমনী বার্তা নিয়ে দেশের গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের কামারপট্টিগুলোতে ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি তৈরির ধুম। বছরজুড়ে অপেক্ষাকৃত নিস্তরঙ্গ সময় কাটানো কামাররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেক এলাকায় যেখানে বছরের অন্যান্য সময় চুল্লি নিভে থাকত, সেখানে এখন আগুনের লেলিহান শিখা আর লোহার ঠুকঠাক শব্দে মুখর চারপাশ।

সাভার ও আশুলিয়ার নামা বাজার, গেন্ডা, হেমায়েতপুর, পল্লী বিদ্যুৎ, পলাশবাড়ী, জিরাবো, জামগড়া, নরসিংহপুর, বলিভদ্র, কলমা, দোসাইদ, ঘোষবাগ ও নলাম ঘোড়া পীর মাজারসহ বিভিন্ন কামারপট্টিতে গিয়ে দেখা গেছে, অনেকেই ছুরি বা বঁটি ধার করাতে ভিড় করছেন। কেউ কেউ আবার অর্ডার দিচ্ছেন নতুন দা, চাপাতি বা ছুরি বানানোর জন্য। গড়ে প্রতিদিন ১৫-২০টি অর্ডার নিচ্ছেন একজন কামার।

আলম নামের এক অভিজ্ঞ কামার বলেন, “ঈদের আগে চাপ বেড়ে যায়। এখন প্রতিদিন গড়ে ১৫ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। লোহা, আগুন আর ঘামে আমাদের দিন কেটে যায়।”

তবে ব্যস্ততার মাঝেও আছে কিছু চ্যালেঞ্জ। লোহার দাম গত কয়েক বছরে ৩০–৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। সেইসঙ্গে কয়লা ও অন্যান্য কাঁচামালের সংকট বেড়েছে। কিন্তু প্রতিযোগিতার বাজারে দাম বাড়াতে পারছেন না কামাররা।

আশুলিয়া বাজারের কামার হাফিজুর রহমান জানান, “লোহার দাম বাড়লেও পুরোনো দামের আশেপাশেই জিনিস বিক্রি করতে হয়। অনেক সময় লাভ না হলেও পুরোনো ক্রেতার কথা ভেবে কাজ করি।”

এই সময়টায় অনেক ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা পণ্য নিয়ে ঘুরে বেড়ান গ্রামগঞ্জে। তারা অস্থায়ী দোকান বসিয়ে বিক্রি করেন দা-বঁটি। স্থানীয় মানুষও হাতের কাছে এসব পেয়ে সন্তুষ্ট। একজন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা বলেন, “দিনে ৪-৫ হাজার টাকার বিক্রি হয়। ঈদের আগে দুই সপ্তাহে ভালো আয় হয়।”

তবে কামাররা বলছেন, ঈদের ব্যস্ততা শুধু সাময়িক। সারা বছর ঠিকমতো আয় রোজগার হয় না। প্লাস্টিক বডির ছুরি, যান্ত্রিক যন্ত্রপাতি এবং বিদেশি আমদানি করা পণ্য বাজারে সহজলভ্য হয়ে পড়ায় দেশীয় কামারশিল্প হারাচ্ছে তার ঐতিহ্য।

চারাবাগ বাজারের তরুণ কামার শিপন বলেন, “আমাদের কাজ কঠিন, কিন্তু তেমন মর্যাদা বা সম্মান নেই। নতুন প্রজন্মও এই পেশায় আসতে চায় না। সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যদি প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা ও প্রযুক্তির সহায়তা দিত, তাহলে হয়তো কামারপেশা বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হতো।”

ঈদুল আযহার এই সময়ে দেশের হাজারো কামার পরিবার আবারও নতুন আশায় বুক বাঁধে। তারা জানেন, এই ক’দিনের ব্যস্ততা সাময়িক হলেও, এটি তাদের জীবনের রসদ জোগায়। প্রয়োজন শুধু রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও আধুনিকীকরণের ছোঁয়া—তাহলেই হয়তো এই শিল্প আবারো ফিরে পাবে তার প্রাচীন গৌরব।