০১:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

ফ্যাসিস্ট দোসর পিডি শাহ কামাল ধরাছোঁয়ার বাইরে

ডেস্ক নিউজ
  • আপডেট: ০৮:২৪:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
  • / ১১৩

★কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে শতকোটি টাকার দুর্নীতি, কানাডায় ১০ কোটির ফ্ল্যাট!
★ ভুয়া বিল-ভাউচারে সরকারের শত কোটি টাকা আত্মসাৎ
★ কানাডায় ছেলের নামে ব্যবসা ও সেকেন্ড হোম, ঢাকায় ৫ কোটির দুটি ফ্ল্যাট
★ ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পরও অদৃশ্য ইশারায় বহাল

বিশেষ প্রতিবেদক:
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর বহু আমলা, দপ্তর প্রধান ও রাজনৈতিক দোসররা গা-ঢাকা দিয়েছেন, কেউ কেউ গ্রেফতারও হয়েছেন। তবে সব অভিযোগের পরও বহাল তবিয়তে রয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের “কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প”-এর পরিচালক ড. মো. শাহ কামাল খান। তার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে অর্থ পাচারের বিস্তর অভিযোগ থাকলেও এখনো কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কামাল খান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ঠ দোসর হিসেবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে লুটপাট চালিয়েছেন। ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে সরকারের শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন মনির হোসেন নামে এক কর্মকর্তা।

অভিযোগে বলা হয়, কামাল খান তার ছেলেকে কানাডায় পাঠিয়ে সেখানে ‘সেকেন্ড হোম’ হিসেবে প্রায় ১০ কোটি টাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন এবং ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ঢাকার মিরপুরের বিজয় রাকিন সিটিতে তার নামে রয়েছে ৫ কোটি টাকা মূল্যের দুটি ফ্ল্যাট। গ্রামের বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলায়, স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনের নামে গড়ে তুলেছেন বিঘার পর বিঘা জমি ও প্লট। ব্যাংকে রয়েছে কোটি কোটি টাকার জমা।

শাহ কামাল ২০০১ সালে ২০তম বিসিএস (কৃষি) ক্যাডারে যোগ দেন এবং ২০২০ সালের ১২ আগস্ট থেকে কৃষি আবহাওয়া প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই প্রকল্পে ১১৯ কোটি টাকার বরাদ্দ বাড়িয়ে ২১২ কোটি করা হয়। কিন্তু সময়মতো কাজ না করে, দায়সারা কার্যক্রম ও চারবার বিদেশ ভ্রমণ করায় প্রকল্পে অগ্রগতি হয়নি। বরং বারবার ধীরগতির কারণে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের ৪৫৫৪টি ইউনিয়নে আইসিটি-নির্ভর আবহাওয়া তথ্য সরবরাহ করা, যাতে কৃষকেরা আগাম আবহাওয়া জেনে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে এ প্রকল্প হয়ে উঠেছে দুর্নীতির অন্যতম উদাহরণ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “কামাল সরকারের ঘনিষ্ঠ দোসর হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তিনি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে শুধু বিদেশ ভ্রমণেই মগ্ন ছিলেন।”

অভিযোগ আরও জানায়, ২০২৪ সালে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থান দমন করতে শাহ কামাল সরকারি অর্থ থেকে কোটি টাকা ব্যয় করেন। বর্তমানে তিনি দেশত্যাগের চেষ্টায় আছেন এবং যেকোনো সময় দেশ ছাড়তে পারেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র।

এছাড়া, আওয়ামী লীগপন্থী বিভিন্ন গ্রন্থে কবিতা ও প্রবন্ধ লিখে, ‘মাতৃভূমি’ এবং ‘ঠিকানা বঙ্গবন্ধু’ নামক প্রকাশনায় নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেন। বিপিএটিসি-তে আওয়ামী রাজনীতির কর্মী হিসেবেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শাহ কামাল খান প্রথমে ফোন ধরেন, কিন্তু পরিচয় জানার পর কল কেটে দেন। এরপর বারবার ফোন করলেও সাড়া দেননি। পরে প্রতিবেদককে আইডি কার্ডসহ অফিসে আসার কথা বলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

ফ্যাসিস্ট দোসর পিডি শাহ কামাল ধরাছোঁয়ার বাইরে

আপডেট: ০৮:২৪:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

★কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে শতকোটি টাকার দুর্নীতি, কানাডায় ১০ কোটির ফ্ল্যাট!
★ ভুয়া বিল-ভাউচারে সরকারের শত কোটি টাকা আত্মসাৎ
★ কানাডায় ছেলের নামে ব্যবসা ও সেকেন্ড হোম, ঢাকায় ৫ কোটির দুটি ফ্ল্যাট
★ ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পরও অদৃশ্য ইশারায় বহাল

বিশেষ প্রতিবেদক:
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর বহু আমলা, দপ্তর প্রধান ও রাজনৈতিক দোসররা গা-ঢাকা দিয়েছেন, কেউ কেউ গ্রেফতারও হয়েছেন। তবে সব অভিযোগের পরও বহাল তবিয়তে রয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের “কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প”-এর পরিচালক ড. মো. শাহ কামাল খান। তার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে অর্থ পাচারের বিস্তর অভিযোগ থাকলেও এখনো কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কামাল খান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ঠ দোসর হিসেবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে লুটপাট চালিয়েছেন। ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে সরকারের শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন মনির হোসেন নামে এক কর্মকর্তা।

অভিযোগে বলা হয়, কামাল খান তার ছেলেকে কানাডায় পাঠিয়ে সেখানে ‘সেকেন্ড হোম’ হিসেবে প্রায় ১০ কোটি টাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন এবং ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ঢাকার মিরপুরের বিজয় রাকিন সিটিতে তার নামে রয়েছে ৫ কোটি টাকা মূল্যের দুটি ফ্ল্যাট। গ্রামের বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলায়, স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনের নামে গড়ে তুলেছেন বিঘার পর বিঘা জমি ও প্লট। ব্যাংকে রয়েছে কোটি কোটি টাকার জমা।

শাহ কামাল ২০০১ সালে ২০তম বিসিএস (কৃষি) ক্যাডারে যোগ দেন এবং ২০২০ সালের ১২ আগস্ট থেকে কৃষি আবহাওয়া প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই প্রকল্পে ১১৯ কোটি টাকার বরাদ্দ বাড়িয়ে ২১২ কোটি করা হয়। কিন্তু সময়মতো কাজ না করে, দায়সারা কার্যক্রম ও চারবার বিদেশ ভ্রমণ করায় প্রকল্পে অগ্রগতি হয়নি। বরং বারবার ধীরগতির কারণে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের ৪৫৫৪টি ইউনিয়নে আইসিটি-নির্ভর আবহাওয়া তথ্য সরবরাহ করা, যাতে কৃষকেরা আগাম আবহাওয়া জেনে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে এ প্রকল্প হয়ে উঠেছে দুর্নীতির অন্যতম উদাহরণ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “কামাল সরকারের ঘনিষ্ঠ দোসর হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তিনি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে শুধু বিদেশ ভ্রমণেই মগ্ন ছিলেন।”

অভিযোগ আরও জানায়, ২০২৪ সালে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থান দমন করতে শাহ কামাল সরকারি অর্থ থেকে কোটি টাকা ব্যয় করেন। বর্তমানে তিনি দেশত্যাগের চেষ্টায় আছেন এবং যেকোনো সময় দেশ ছাড়তে পারেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র।

এছাড়া, আওয়ামী লীগপন্থী বিভিন্ন গ্রন্থে কবিতা ও প্রবন্ধ লিখে, ‘মাতৃভূমি’ এবং ‘ঠিকানা বঙ্গবন্ধু’ নামক প্রকাশনায় নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেন। বিপিএটিসি-তে আওয়ামী রাজনীতির কর্মী হিসেবেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শাহ কামাল খান প্রথমে ফোন ধরেন, কিন্তু পরিচয় জানার পর কল কেটে দেন। এরপর বারবার ফোন করলেও সাড়া দেননি। পরে প্রতিবেদককে আইডি কার্ডসহ অফিসে আসার কথা বলেন।