ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে বদলী ও পদায়নে আইন মানা হচ্ছে না
এবি সিদ্দীক ভূইঁয়া : ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে বদলী ও পদায়নে আইন মানা হচ্ছে না। গত ১৭ই এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ মো.ওহিদুল ইসলামকে ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) পদে বদলীর আদেশ জারি করেন।অথচ মাত্র সাড়ে ৫ মাস আগে অন্তবর্তী সরকার আওয়ামী পন্থী হিসাবে চিহ্নিত করে ওহিদুল ইসলামকে অধিপ্তরের উপ পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মিরপুর ট্রেনিং কমপ্লেক্সে অধ্যক্ষ হিসাবে বদলী করে।ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের বদলী ও পদায়ন নীতিমালা-২০২৩ অনুযায়ী ওহিদুল ইসলামের অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পদে ৩ বছরের আগে পদায়নের কোন সুযোগ নেই। কারণ নীতিমালার ৫ দশমিক ১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একই কর্মস্থলে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরীকাল একাধারে ৩ বছররের অধিক হলে বদলীযোগ্য হবেন। এর আগে বদলীর আবেদনেরই কোন সুযোগ নেই। ওহিদুল ইসামের পদায়নের ক্ষেত্রে নীতিমালার এ শর্তটি মানা হয়নি।এদিকে বদলী ও পদায়ন নীতিমালার ৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নবম ও তার উর্ধ্বে কর্মকর্তাদের বদলী ও পদায়নের ক্ষেত্রে অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ নিষ্পণ্ন করবেন। এক্ষেত্রে ওহিদুল ইসলামের বদলী ও পদায়নে অধিদপ্তর থেকে কোন সুপারিশ না করা হলেও ভুতুড়ে বদলীর আদেশ জারি করেন সংশ্লিষ্টরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের এমন বিধি বহিভূত বদলীর আদেশ ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরে অসন্তোষ তৈরি করছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিপ্তরের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল-এনডিসি এ প্রতিবেদককে বলেন, ওহিদুল ইসলামের বদলীর আদেশটি মন্ত্রণালয় জারি করেছে। আমি এর বেশিকিছু বলতে পারবো না। এ বিষয়ে আপনার কোন কিছু জানার থাকলে আপনি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন।এদিকে ওহিদুল ইসলামকে পুনরায় ফায়ার সার্ভিসের পদে পদায়ন করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের উপ সচিব সফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। ওহিদুল ইসলামের পদায়নের বিষয়টি সিনিয়ররা বলতে পারবেন।
উল্লেখ্য ওহিদুল ইসলামকে পদায়নের প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন উপ সচিব সফিকুল ইসলাম। শুধু বদলী আর পদায়নই নয়। ওহিদুল ইসলাম ফায়ার সার্ভিসের খুবই আলোচিত নাম। আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে ছিলেন খুবই প্রভাবশালী। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে ছিল খুবই ঘনিষ্ট সম্পর্ক। তাই পদে উপ-পরিচালক হলেও ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তর চলতো তার মতোই। নিয়োগ,কেনা-কাটা, টেন্ডার সব কিছুই ওহিদুল ইসলাম নিয়ন্ত্রণ করতেন।নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফায়ার সার্ভিসের উর্ধবতন কর্মকর্তা প্রতিবেদককে বলেন, ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তবর্তী সরকারের বয়স আট মাস অতিক্রম করলেও ফ্যাসিষ্টমুক্ত করা যায়নি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরকে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী ও মদদপুষ্ট কর্মকর্তা ছিলেন ওহিদুল ইসলাম।
এ জন্য ৫ই আগষ্টের পর তাকে অধিদপ্তর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সরিয়ে দেওয়ার সাড়ে ৫ মাসের মাথায় আওয়ামীলী কর্মকর্তাদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে ওহিদুলকে পুণরায় উপ পরিচালক পদে বহাল করা হয়েছে।ওহিদুল ইসলাম বিধি বহিভুতভাবে ২০২২ সালে ১৩ই মে ফায়ার সার্ভিস শারীরিক যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষা স্থগিত করেন।এ বিষয়ে তখন সমালোচনা সৃষ্টি হলে তাকে উপ পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) পদ থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে উপ পরিচালক হিসেবে রাজশাহীতে বদলী করা হয়। যদিও কিছুদিন পরই তাকে আবার অধিদপ্তরের উপ পরিচালক পদে পদায়ন করে ফিরিয়ে আনা হয়।তিনি বলেন, ওহিদুলের এ সিন্ডিকেট আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ১৫/১৬ বছর ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। তারা নিয়োগ,বদলী,কেনা-কাটা, পদন্নোতি, পদায়নসহ সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেছে। এসব করে সিন্ডিকেটটি শতশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে গেলেও এ সিন্ডিকেট এখনো শক্তিশালী।
এদিকে জানা যায়,অভিযুক্ত ব্যক্তি ঢাকায় সুবিধাজনক পদায়ন পেতে জোর তদবির চালিয়ে পেয়েছেন পদ।যিনি ছাত্র জনতার আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ,শ্রমিক লীগকে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ! রয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ট্রেনিং কমপ্লেক্স, মিরপুর, ঢাকা, সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ ওহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
ভাই শাহীন আওয়ামী লীগের নেতা। ৫ আগষ্টের পর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।তার গ্রাম:নারসি পোস্ট :হার্ট ফুলবাড়ী থানা: সারিয়াকান্দি
জেলা :বগুড়া।অধিদপ্তরে যুগ যুগ ধরে চেয়ার আঁকড়ে ধরে থাকা কর্মকর্তারা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পুরো আমল জুড়ে ঢাকা ও আশেপাশে গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থেকে ফয়দা লুটেছেন।নিয়োগসহ লবিং এবং পছন্দের একজন ঠিকাদার দিয়ে কাজ করিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধভাবে
অর্থ উপার্জন করেন।তার সাথে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক সচিবের সঙ্গে ছিল নিবিড় সম্পর্ক। এ সকল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে পরবর্তীকালে আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।পরে
ফায়ার সার্ভিসে এসব আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা ছাত্র জনতার মহান উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অর্থ খরচ করেন।এমন অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তদবির চালিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ট্রেনিং কমপ্লেক্স, মিরপুর ঢাকা, অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করে সেখানেও সক্রিয় ছিলেন ।তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। এবার তিনি মোটা অংকের টাকা খরচ করে ঢাকায় সুবিধাজনক পদায়ন পেতে জোর তদবির চালিয়ে পেয়েছেন পদ। এ ব্যাপারে তার পেছনে অর্থ বিনিয়োগসহ লবিং করিয়ে দিচ্ছেন তারই পছন্দের একজন ঠিকাদার যা উপর মহলের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এর আগে, গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে পাওয়া সকল অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে প্রশ্নাতীতভাবে সকল অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় মো. ওহিদুল ইসলামকে উপ পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) পদ থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে উপ পরিচালক হিসেবে রাজশাহীতে বদলী করা হয়। কিন্তু রাজশাহীতে থাকতে নারাজ মো. ওহিদুল ইসলাম। ঢাকায় পোস্টিং পেতে বিভিন্ন মহলে দৌড়াচ্ছেন তিনি। লবিং করিয়ে সুবিধা করতে না পেরে ভিন্ন পথে হাটছেন, নেমেছেন কোটি টাকা খরচের মিশন নিয়ে।
এক্ষেত্রে টাকার যোগান দিচ্ছে তারই ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার । যার অফিস ঢাকার শ্যামলীতে অবস্থিত। জানা যায়, উক্ত ঠিকাদার মো. ওহিদুল ইসলাম থেকে সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী। পছন্দের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সুবিধাজনক পদে বদলী করে এনে তার মত করে সকল ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। এছাড়াও নিয়োগ বাণিজ্যেও রয়েছে উক্ত ঠিকাদারের সম্পৃক্ততায়।
উল্লেখ্য, এক ঠিকাদার নিজেকে ফায়ার সার্ভিসের ছায়া ডিজি হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তিনি কখনো আওয়ামী লীগ আবার কখনো বিএনপি যে যখন সুবিধায় থাকে তখন সেই দলেই লোক বলে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন।ফায়ার সার্ভিসের একাধিক লোক সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত তাদের কে নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সেফটি প্ল্য্যান, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের বদলি তদবির করেন। যার কারনে অন্যান্য ঠিকাদাররা ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে।অতীতে এক ঠিকাদার ও মো. ওহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এর আগেও মো. ওহিদুল সহকারী পরিচালক, ওয়ার হাউস ও ফায়ার প্রিভেনশন এর দায়িত্বে থাকাকালীন সময় কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়মের জন্য পত্রিকার শিরোনাম হয়েছেন অনেক বার।
মো. ওহিদুল ইসলাম এডি ওয়্যার হাউজ এবং ডিডি এডমিন থাকা কালিন সময়ে তার স্ত্রীর-সন্তান ও অন্যান্য আত্মীয়দের নামে বগুড়া, ঢাকা, রাজশাহী, দিনাজপুর, জয়দেবপুরসহ বিভিন্ন স্হানে ৫ একর জমি ক্রয় করেছেন। এছাড়া স্ত্রীর নামে ও মেয়ের নামে ২টি প্লট ২টি গাড়ী রয়েছে তার। উত্তরাতে এক ঠিকাদারের সাথে পার্টনারশীপে ব্যবসা করে আসছেন। এছাড়াও, উত্তরাতে তার রয়েছে ২০ কাঠা জমি। ঠিকাদারের সাথে গড়ে তুলেছেন ডেইরি ফার্ম যার আনুমানিক মূল্য হবে ৫ কোটি টাকা। মো. ওহিদুল ইসলামের এহেন কর্মকান্ডে বিব্রত খোদ ফায়ার সার্ভিসের উর্ধতন কর্মকর্তারা।
বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত থাকা এবং ডিপার্মেন্টের ভেতরে বেপরোয়া কর্মকান্ডে বিরক্ত ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। যার ফলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্ট্যান্ড রিলিজ করে উপ-পরিচালক, রাজশাহী হিসাবে বদলি করা হয়েছিল ওহিদুলকে। সেখানে গিয়ে তিনি আগের চেয়ে আরও বেশি বেপরোয়া ও দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েন।ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বারবার তাকে সতর্ক করার পরেও তিনি তার কাজ অব্যাহত রাখতে থাকেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ পুনরায় তাকে উপ-পরিচালক (উন্নয়ন) হিসাবে অধিদপ্তরে বদলি করে। তবে ওহিদুল সেখানে যোগদান না করে উপর মহলে তদবীরের মাধ্যমে উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) অথবা উপ-পরিচালক ঢাকা হওয়ার জন্য চেষ্টা করেন ।পরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ট্রেনিং কমপ্লেক্স, মিরপুর, ঢাকা, অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করে ছিলেন।
এদিকে ওহিদুল ইসলামকে পুনরায় অধিদপ্তরের উপ পরিচালক পদে পদায়ন করায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।কেন-না, মো. ওহিদুল ইসলাম এর আগে যখন এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তখন তিনি প্রশাসনিক খড়গ চালিয়ে ফায়ার কর্মীদের অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন। এজন্য বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ওহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ হয়।
ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরে ওহিদুল ছিলেন আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিটি দলীয় কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করতেন। সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল খান ও প্রতিমন্ত্রী সামশুল হক টুকুর সাথে ছিল তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক। জুলাই-আগষ্টের ছাত্র জনতার আন্দোলন ব্যর্থ করতে অর্থ বিনিয়োগও করেছিলেন।অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওহিদুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো সঠিক নয়। আমি বদলী আর পদায়ন নিয়ে কোন তদবির করি নাই। এক্ষেত্রে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে সেটি মন্ত্রণালয়ই করেছে।