০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫

দেশের অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তে ফের সক্রিয় জাল নোট চক্র

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ০৭:২৮:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১০

মো. রাকিবুজ্জামান | বর্তমান কথা

দেশের অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করার এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্রে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি সংঘবদ্ধ জাল নোট চক্র। পার্শ্ববর্তী দেশের একটি বিশেষ গোয়েন্দা ইউনিটের সহায়তায় প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ জাল নোট বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে।

পার্শ্ববর্তী দেশে তৈরি, চোরাপথে দেশে প্রবেশ

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের টাঁকশালে ছাপা নোটের আদলে নিখুঁতভাবে তৈরি কাগজের এই জাল মুদ্রাগুলো পার্শ্ববর্তী দেশে ছাপা হচ্ছে। এরপর সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দাদের সহায়তায় চোরাপথে বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছে। দেশের ভেতরে প্রবেশের পর এই নোট বিভিন্ন দালাল ও বিক্রেতার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে খুচরা বাজারে।

গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, ভারতে পলাতক আওয়ামী লীগের কিছু নেতা এই চক্রের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাদের সহায়তায় গড়ে ওঠা নেটওয়ার্কে রয়েছে ডিলার, সরবরাহকারী ও খুচরা বিক্রেতা—যাদের সবাই একটি নির্দিষ্ট আদর্শে বিশ্বাসী বলে জানা গেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাল নোটের প্রচার

অনুসন্ধানে জানা যায়, সংঘবদ্ধ চক্রটি ফেসবুক, টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাল নোট বেচাকেনার প্রচার চালাচ্ছে। ‘সিক্রেট গ্রুপ’ ও ইনবক্স চ্যাটে চলছে দরদাম ও লেনদেনের আলোচনা।

বিজ্ঞাপনগুলোতে দেওয়া হচ্ছে চটকদার অফার—

“১ লাখ টাকার জাল নোট মাত্র ১০ থেকে ১৮ হাজার টাকায়।”
“মানি ব্যাক গ্যারান্টি সহ উচ্চমানের রেপ্লিকা নোট।”

চক্রটি সাংকেতিক ভাষায় বিজ্ঞাপন দেয়, যাতে সাধারণ মানুষের চোখে ধরা না পড়ে। যেমন — ‘নতুন মডেলের রঙিন প্রিন্ট’, ‘পুজোর বাজারের জন্য স্পেশাল অফার’, ‘ঈদ অফারের মতো দারুণ সুযোগ’, ‘উচ্চমানের রেপ্লিকা’ ইত্যাদি।

সরাসরি যোগাযোগে ভয়ংকর বাস্তবতা

‘জাল টাকা বানানোর প্রসিকিউটর’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দেওয়া হয়েছে — “জাল টাকা নিতে চান?” সেখানে ফোন নাম্বারসহ যোগাযোগের আহ্বান জানানো হয়। ঐ নাম্বারে ফোন করলে অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয়,

“১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার সব নোট পাওয়া যাবে। এক লাখ টাকার জাল নোট মাত্র ১৮ হাজারে।”

ওই ব্যক্তি নিজের নাম গোপন রেখে দাবি করেন, তিনি টাঙ্গাইলে থাকেন, মাঝে মাঝে গাজীপুরেও অবস্থান করেন। অগ্রিম টাকা পাঠালে কুরিয়ারের মাধ্যমে ‘মাল’ পাঠানো হবে—এই প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়।

আরেকজন বিক্রেতা বলেন, “বিশ্বাস তৈরি করতে আমরা স্যাম্পল নোট পাঠাই। একবার দেখলেই বুঝবেন, টাকাটা আসল টাকার মতোই নিখুঁত।”

‘ইমরোজ কালেক্ট’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে বিজ্ঞাপনে লেখা হয় —

“এ গ্রেডের মাল। ওয়াটারপ্রুফ জলছাপসহ। মেশিন ছাড়া কারও বাপেরও ধরার ক্ষমতা নেই।”

পুলিশের অবস্থান

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন,

“জাল নোটের কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অভিযান আরও জোরদার করেছি। যেকোনো মূল্যে এই চক্রকে আইনের আওতায় আনা হবে।”

সতর্কতা বার্তা

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন,
জাল টাকা কিনতে বা ব্যবহার করতে কেউ প্রলুব্ধ হলে তা একটি ফৌজদারি অপরাধ। কেউ এ ধরনের তথ্য জানলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় বা ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটে জানাতে বলা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

বিজ্ঞাপন: ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট এর জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৮২৪৯০৯০১০
বিজ্ঞাপন: ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট এর জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৮২৪৯০৯০১০

দেশের অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তে ফের সক্রিয় জাল নোট চক্র

আপডেট: ০৭:২৮:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫

মো. রাকিবুজ্জামান | বর্তমান কথা

দেশের অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করার এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্রে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি সংঘবদ্ধ জাল নোট চক্র। পার্শ্ববর্তী দেশের একটি বিশেষ গোয়েন্দা ইউনিটের সহায়তায় প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ জাল নোট বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে।

পার্শ্ববর্তী দেশে তৈরি, চোরাপথে দেশে প্রবেশ

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের টাঁকশালে ছাপা নোটের আদলে নিখুঁতভাবে তৈরি কাগজের এই জাল মুদ্রাগুলো পার্শ্ববর্তী দেশে ছাপা হচ্ছে। এরপর সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দাদের সহায়তায় চোরাপথে বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছে। দেশের ভেতরে প্রবেশের পর এই নোট বিভিন্ন দালাল ও বিক্রেতার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে খুচরা বাজারে।

গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, ভারতে পলাতক আওয়ামী লীগের কিছু নেতা এই চক্রের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাদের সহায়তায় গড়ে ওঠা নেটওয়ার্কে রয়েছে ডিলার, সরবরাহকারী ও খুচরা বিক্রেতা—যাদের সবাই একটি নির্দিষ্ট আদর্শে বিশ্বাসী বলে জানা গেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাল নোটের প্রচার

অনুসন্ধানে জানা যায়, সংঘবদ্ধ চক্রটি ফেসবুক, টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাল নোট বেচাকেনার প্রচার চালাচ্ছে। ‘সিক্রেট গ্রুপ’ ও ইনবক্স চ্যাটে চলছে দরদাম ও লেনদেনের আলোচনা।

বিজ্ঞাপনগুলোতে দেওয়া হচ্ছে চটকদার অফার—

“১ লাখ টাকার জাল নোট মাত্র ১০ থেকে ১৮ হাজার টাকায়।”
“মানি ব্যাক গ্যারান্টি সহ উচ্চমানের রেপ্লিকা নোট।”

চক্রটি সাংকেতিক ভাষায় বিজ্ঞাপন দেয়, যাতে সাধারণ মানুষের চোখে ধরা না পড়ে। যেমন — ‘নতুন মডেলের রঙিন প্রিন্ট’, ‘পুজোর বাজারের জন্য স্পেশাল অফার’, ‘ঈদ অফারের মতো দারুণ সুযোগ’, ‘উচ্চমানের রেপ্লিকা’ ইত্যাদি।

সরাসরি যোগাযোগে ভয়ংকর বাস্তবতা

‘জাল টাকা বানানোর প্রসিকিউটর’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দেওয়া হয়েছে — “জাল টাকা নিতে চান?” সেখানে ফোন নাম্বারসহ যোগাযোগের আহ্বান জানানো হয়। ঐ নাম্বারে ফোন করলে অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয়,

“১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার সব নোট পাওয়া যাবে। এক লাখ টাকার জাল নোট মাত্র ১৮ হাজারে।”

ওই ব্যক্তি নিজের নাম গোপন রেখে দাবি করেন, তিনি টাঙ্গাইলে থাকেন, মাঝে মাঝে গাজীপুরেও অবস্থান করেন। অগ্রিম টাকা পাঠালে কুরিয়ারের মাধ্যমে ‘মাল’ পাঠানো হবে—এই প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়।

আরেকজন বিক্রেতা বলেন, “বিশ্বাস তৈরি করতে আমরা স্যাম্পল নোট পাঠাই। একবার দেখলেই বুঝবেন, টাকাটা আসল টাকার মতোই নিখুঁত।”

‘ইমরোজ কালেক্ট’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে বিজ্ঞাপনে লেখা হয় —

“এ গ্রেডের মাল। ওয়াটারপ্রুফ জলছাপসহ। মেশিন ছাড়া কারও বাপেরও ধরার ক্ষমতা নেই।”

পুলিশের অবস্থান

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন,

“জাল নোটের কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অভিযান আরও জোরদার করেছি। যেকোনো মূল্যে এই চক্রকে আইনের আওতায় আনা হবে।”

সতর্কতা বার্তা

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন,
জাল টাকা কিনতে বা ব্যবহার করতে কেউ প্রলুব্ধ হলে তা একটি ফৌজদারি অপরাধ। কেউ এ ধরনের তথ্য জানলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় বা ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটে জানাতে বলা হয়েছে।