টেকনাফ বন্দরে তিন মাস ধরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ: কোটি টাকার পণ্য পচে যাচ্ছে, বিপাকে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা
- আপডেট: ০৮:২৯:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
- / ২২৮
শাহিন আলম, টেকনাফ
কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে তিন মাস ধরে মিয়ানমারের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এই অচলাবস্থার ফলে মজুদ করা কোটি কোটি টাকার রপ্তানি পণ্য বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন শতাধিক আমদানি-রপ্তানিকারক। আর বেকার হয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন দেড় হাজারেরও বেশি শ্রমিক, খালাসি ও ট্রাকচালক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১২ এপ্রিল সর্বশেষ রাখাইন রাজ্যের মংডু থেকে একটি কাঠের বোট টেকনাফ বন্দরে আসে। তারপর থেকে আর কোনো পণ্য আমদানি বা রপ্তানি হয়নি। এই স্থবিরতার পেছনে ‘আরাকান আর্মির সম্মতি না পাওয়া’কে কারণ হিসেবে দেখছেন আমদানি-রপ্তানিকারকরা।
📦 কোটি টাকার পণ্য এখন বর্জ্য
টেকনাফ স্থলবন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জসিম উদ্দীন চৌধুরী জানান, “তিন মাস ধরে বন্দর অচল থাকায় মায়ানমারে রপ্তানির জন্য মজুদ করা ২২ হাজার ৮৫০ বস্তা সিমেন্ট, ২ হাজার ৭০০ বস্তা আলু এবং ১ হাজার ৯০ বস্তা সফট ড্রিংকস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রোদ-বৃষ্টি মিলিয়ে এসব পণ্যের বড় একটি অংশ একেবারে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে।”
সরাসরি বন্দর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগের সেই কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ আর নেই। ট্রাকের সারি, শ্রমিকদের ব্যস্ততা, পণ্য ওঠানামার দৃশ্য— সব আজ নিস্তব্ধতায় ঢাকা। তালাবদ্ধ গোডাউনগুলোতে জংধরা দরজা আর ভেতরে ছাগল ও হাঁস পালন হচ্ছে। নাফ নদীর পাড়ে থাকা জেটিগুলোতেও নেই কোনো পণ্যবোঝাই ট্রলার।
🧍 শ্রমিকেরা বেকার, পরিবারে অভাব
শ্রমিক সর্দার মো. আলম জানান, “আমাদের বন্দর এলাকায় প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করত। এখন প্রায় সবাই বেকার। পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে।” কেউ কেউ বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবছেন, কেউ বা পাড়ি জমাচ্ছেন চট্টগ্রামে নতুন জীবিকার খোঁজে।
📉 রাজস্বেও ধস
টেকনাফ বন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা মো. সোহেল উদ্দিন বলেন, “২০২২-২৩ অর্থবছরে এই বন্দর থেকে ৬৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল, ২০২৩-২৪ সালে তা নেমে আসে ৪০৪ কোটিতে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুর তিন মাসে কোনো রাজস্বই আসেনি।”
📣 ব্যবসায়ীদের আকুতি: আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চান
বন্দরসংলগ্ন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, “আমরা জানি না কেন হঠাৎ সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেল। রপ্তানির জন্য মজুদ রাখা কোটি কোটি টাকার সিমেন্ট ও আলু এখন ধ্বংসস্তুপ। আমাদের তো কেউ ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না।”
এক্সপ্রেস এজেন্সির প্রতিনিধি মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, “রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে শুধু আলুই নয়, কোমল পানীয়, চানাচুর, চিপস, বিস্কুট— সবই একে একে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ইতোমধ্যে।”
📢 চেম্বারের আহ্বান
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ খোকা বলেন, “টেকনাফ স্থলবন্দর দেশের বৈদেশিক আয়ের একটি অন্যতম উৎস। আলোচনা বা কূটনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধান করে দ্রুত আমদানি-রপ্তানি চালু করতে হবে।”
















