লালপুরে বাবা-মেয়ে একসঙ্গে এইচএসসি পাস, বাবার ফল মেয়ের চেয়ে ভালো
- আপডেট: ০৩:৫৮:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
- / ৫৫
নিজস্ব প্রতিবেদক | নাটোর
নাটোরের লালপুরে ঘটেছে এক চমকপ্রদ ও অনুপ্রেরণাদায়ক ঘটনা। একই সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সফল হয়েছেন এক বাবা ও তার মেয়ে। বিশেষত্ব হলো—ফলাফলে মেয়েকে পেছনে ফেলেছেন বাবা আব্দুল হান্নান।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, বাবা আব্দুল হান্নান পেয়েছেন জিপিএ-৪.৩৩, আর তার মেয়ে হালিমা খাতুন পেয়েছেন জিপিএ-৩.৭১। ফল প্রকাশের পরই এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। স্থানীয়ভাবে প্রশংসার ঝড় বইছে তাদের এই অর্জনকে ঘিরে।
জানা গেছে, গোপালপুর পৌরসভার নারায়ণপুর গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছোট ছেলে আব্দুল হান্নান ১৯৯৮ সালে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাইস্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। এরপর সংসার ও জীবিকার তাগিদে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। বর্তমানে তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করছেন।
তবে শিক্ষার প্রতি তার আগ্রহ কখনও হারাননি। দীর্ঘ ২৫ বছর পর, ২০২৩ সালে রুইগাড়ি হাই স্কুল থেকে পুনরায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সফলভাবে পাস করেন। তখন তিনি কাউকে না জানিয়ে নিজের মেয়ের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নেন, যা প্রকাশের পর এলাকায় ব্যাপক প্রশংসিত হয়।
এরপর ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি বাঘা কাকড়ামারি কলেজ থেকে, আর মেয়ে গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে। এবারের ফলাফলে দুজনই উত্তীর্ণ হয়েছেন—তাও আবার বাবার ফল মেয়ের চেয়ে ভালো!
মেয়ে হালিমা খাতুন বলেন,
“আমাদের পরিবারে দারিদ্র্য থাকলেও বাবার পড়াশোনার আগ্রহ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমরা চাই, একসঙ্গে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করতে।”
বাবা আব্দুল হান্নান বলেন,
“ছোটবেলায় দারিদ্র্যের কারণে পড়াশোনা শেষ করতে পারিনি। মেয়েকে পড়াতে গিয়েই আবার নিজের পড়ার ইচ্ছা জাগে। বয়স কোনো বাধা নয়—ইচ্ছা থাকলে শেখা সম্ভব, আমি সেটাই প্রমাণ করেছি।”
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন,
“একসঙ্গে বাবা-মেয়ে এইচএসসি পাস করেছেন—এটি সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। তাদের গল্প সমাজে শিক্ষার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে।”



























