০২:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক শাহজাহানের অবৈধ সম্পদের পাহাড়!

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট: ০৬:৫২:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১৪৩

 

পর্ব : ২

বিশেষ প্রতিবেদক:

পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের সাবেক পরিচালক মো. শাহজাহান দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় আছেন দুর্নীতি, জাল-জালিয়াতি ও ভুয়া বিল ভাউচার কেলেঙ্কারির কারণে। ক্ষমতার দাপট খাটিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করলেও এখনো বহাল তবিয়তে দাপটের সাথেই দায়িত্ব পালন করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে শাহজাহান বিআইডব্লিউটিএতে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তাদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। পতিত সরকারের সময় থেকেই তেল খরচ ও জাহাজ মেরামতের নামে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট করেছেন। এসব ঘটনায় দুদক ও বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যানের দপ্তরে অসংখ্য অভিযোগ জমা হলেও রহস্যজনক কারণে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ভূয়া বিলের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ।
নারায়ণগঞ্জ নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা দপ্তরে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ও নির্ভীক পরিচালনার নামে তেলের ভুয়া খরচ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য পায় দুদক। তদন্তে নথিপত্রে ব্যাপক গরমিল ধরা পড়ে।
একইভাবে বয়া বিকন বাতি আমদানির নামে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে পরিচালক শাহজাহান তার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার বাহারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটের নামে একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ধারাবাহিকভাবে ভূয়া বিলের মাধ্যমে সরকারি অর্থ লুটপাট করা হয়।আখি এন্টারপ্রাইজ (টিপি-১৩৫): ৭,৭২,০০০ টাকা।তানিয়া এন্টারপ্রাইজ (এমপি-১২): ৬,৮১,০০০ টাকা।তানজিল ডক ইয়ার্ড (টিপি-৮০): ৭,১৩,৩৫২ টাকা।তানজিল ডক ইয়ার্ড (টিপি-১৭৩): ৯,৩৬,০০০ টাকা।তানিয়া এন্টারপ্রাইজ (স্পিড বোট-১ মেরামত): ৮৮,৪১০০ টাকা।আলিফ এন্টারপ্রাইজ (টিপি-৪৫): ৪,৯৮,১৫১ টাকা।এভাবে ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে শাহজাহান গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ।
অবৈধ সম্পদ সাম্রাজ্য!
অভিযোগ রয়েছে, শাহজাহান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তার কিছু উল্লেখযোগ্য সম্পদ—
মুগদায় আলিফ গার্ডেন নামের ভবনে প্রায় ৩ কোটি টাকায় দুটি ফ্ল্যাট।মুগদার ঝিলপাড় রোডে ২ কোটি টাকায় দুটি আলিশান ফ্ল্যাট।
কেরানীগঞ্জে ঠিকাদার বাহারের সাথে যৌথ মালিকানায় শত কোটি টাকায় নির্মিত ডক ইয়ার্ড।
আশুলিয়ার ইসলামনগরে ১০ কাঠা জায়গায় প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত যুগ্ম ভবন।
সাভার বাজারে দুটি দোকান ও কাঠগড়ায় চার ইউনিটের সাততলা ভবন (মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা)।মোহাম্মদপুর হাউজিং-এ প্রায় ৭ কোটি টাকা দিয়ে ৬ শতাংশ জমি।
রামপুরা ও হাতিরপুলে একাধিক ফ্ল্যাট।
নিজ গ্রামে (দাগনভূঞা) প্রায় ১০ কোটি টাকার একটি বাড়ি দখলসদৃশভাবে ক্রয়।
এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত কোটি কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে বলে জানা যায়।
এসব বিষয়ে মো. শাহজাহানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিআইডব্লিউটিএর এই সিন্ডিকেটনেতা কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ নিয়ে দুদক তদন্ত শুরু করলেও এখনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে— প্রমাণিত দুর্নীতির পরও কেন তিনি বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন?

Please Share This Post in Your Social Media

বিজ্ঞাপন: ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট এর জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৮২৪৯০৯০১০
বিজ্ঞাপন: ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট এর জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৮২৪৯০৯০১০

বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক শাহজাহানের অবৈধ সম্পদের পাহাড়!

আপডেট: ০৬:৫২:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

পর্ব : ২

বিশেষ প্রতিবেদক:

পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের সাবেক পরিচালক মো. শাহজাহান দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় আছেন দুর্নীতি, জাল-জালিয়াতি ও ভুয়া বিল ভাউচার কেলেঙ্কারির কারণে। ক্ষমতার দাপট খাটিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করলেও এখনো বহাল তবিয়তে দাপটের সাথেই দায়িত্ব পালন করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে শাহজাহান বিআইডব্লিউটিএতে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তাদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। পতিত সরকারের সময় থেকেই তেল খরচ ও জাহাজ মেরামতের নামে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট করেছেন। এসব ঘটনায় দুদক ও বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যানের দপ্তরে অসংখ্য অভিযোগ জমা হলেও রহস্যজনক কারণে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ভূয়া বিলের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ।
নারায়ণগঞ্জ নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা দপ্তরে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ও নির্ভীক পরিচালনার নামে তেলের ভুয়া খরচ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য পায় দুদক। তদন্তে নথিপত্রে ব্যাপক গরমিল ধরা পড়ে।
একইভাবে বয়া বিকন বাতি আমদানির নামে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে পরিচালক শাহজাহান তার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার বাহারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটের নামে একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ধারাবাহিকভাবে ভূয়া বিলের মাধ্যমে সরকারি অর্থ লুটপাট করা হয়।আখি এন্টারপ্রাইজ (টিপি-১৩৫): ৭,৭২,০০০ টাকা।তানিয়া এন্টারপ্রাইজ (এমপি-১২): ৬,৮১,০০০ টাকা।তানজিল ডক ইয়ার্ড (টিপি-৮০): ৭,১৩,৩৫২ টাকা।তানজিল ডক ইয়ার্ড (টিপি-১৭৩): ৯,৩৬,০০০ টাকা।তানিয়া এন্টারপ্রাইজ (স্পিড বোট-১ মেরামত): ৮৮,৪১০০ টাকা।আলিফ এন্টারপ্রাইজ (টিপি-৪৫): ৪,৯৮,১৫১ টাকা।এভাবে ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে শাহজাহান গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ।
অবৈধ সম্পদ সাম্রাজ্য!
অভিযোগ রয়েছে, শাহজাহান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তার কিছু উল্লেখযোগ্য সম্পদ—
মুগদায় আলিফ গার্ডেন নামের ভবনে প্রায় ৩ কোটি টাকায় দুটি ফ্ল্যাট।মুগদার ঝিলপাড় রোডে ২ কোটি টাকায় দুটি আলিশান ফ্ল্যাট।
কেরানীগঞ্জে ঠিকাদার বাহারের সাথে যৌথ মালিকানায় শত কোটি টাকায় নির্মিত ডক ইয়ার্ড।
আশুলিয়ার ইসলামনগরে ১০ কাঠা জায়গায় প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত যুগ্ম ভবন।
সাভার বাজারে দুটি দোকান ও কাঠগড়ায় চার ইউনিটের সাততলা ভবন (মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা)।মোহাম্মদপুর হাউজিং-এ প্রায় ৭ কোটি টাকা দিয়ে ৬ শতাংশ জমি।
রামপুরা ও হাতিরপুলে একাধিক ফ্ল্যাট।
নিজ গ্রামে (দাগনভূঞা) প্রায় ১০ কোটি টাকার একটি বাড়ি দখলসদৃশভাবে ক্রয়।
এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত কোটি কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে বলে জানা যায়।
এসব বিষয়ে মো. শাহজাহানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিআইডব্লিউটিএর এই সিন্ডিকেটনেতা কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ নিয়ে দুদক তদন্ত শুরু করলেও এখনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে— প্রমাণিত দুর্নীতির পরও কেন তিনি বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন?