খাগড়াছড়িতে ওয়েল ফুডে মেয়াদোত্তীর্ণ ও বাসি খাবার বিক্রির অভিযোগে সমালোচনার ঝড়
- আপডেট: ০৮:২৮:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫
- / ১০৯
“ওয়েল ফুড” মিষ্টান্ন খাবারের জগতে ঐতিহ্যবাহী, রুচিশীল, অভিজাত ও সুনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির শাখা বা শোরুম। খাগড়াছড়িতেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে ভোজনরসিকদের মাঝে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ও খ্যাতি থাকলেও খাগড়াছড়ি শাখা সেই মান বজায় রাখতে পারছে না। স্থানীয়রা বলছেন, শাখা পরিচালনায় মালিকপক্ষের উদাসীনতার কারণে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, খাগড়াছড়ি জেলা সদরের ওয়েল ফুড শাখায় দীর্ঘদিন ধরে ভোক্তাদের কাছে মেয়াদোত্তীর্ণ ও পচা-বাসি খাবার বিক্রি করা হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন অনেকে।
জেলা সদরের স্বনির্ভর এলাকার বাসিন্দা মিলন ত্রিপুরা জানান, বাচ্চার জন্মদিনে সারপ্রাইজ দিতে ওয়েল ফুড খাগড়াছড়ি শোরুম থেকে সবচেয়ে দামি ও ভালো কেক কিনেছিলেন। কিন্তু বাসায় এনে কেক কাটার পর দেখা যায়, কেক খাওয়ার অযোগ্য। মুখে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পচা গন্ধ পাওয়া যায়। অভিযোগ জানালে মালিকপক্ষ জানান, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন মিষ্টির গাড়ি আসতে পারেনি, আর বিক্রি কম থাকায় হয়তো কিছু পণ্যের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তবে তাদের দাবি, সচরাচর এমন হয় না। এ বিষয়ে মিলন ত্রিপুরা ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।
সদর উপজেলার গঞ্জপাড়ার বাসিন্দা আব্দুর রহিম জানান, ছেলে পক্ষকে বিয়ের জন্য দেখতে আসায় অতিথিদের জন্য ওয়েল ফুড থেকে ৫ কেজি ভালো মানের মিষ্টি কিনেছিলেন। কিন্তু বাসায় গিয়ে একটি ‘কালো জাম’ (মিষ্টির নাম) খেতেই দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। তিনি মিষ্টি নিয়ে শোরুমে গেলে উল্টো মালিকপক্ষের রোষানলে পড়েন। অভিযোগের এক পর্যায়ে মালিক সিরাজুল ইসলাম তাকে স্থানীয় পুলিশ সুপারের নাম ব্যবহার করে ভয় দেখান। বলেন, “পুলিশ সুপার আমার আত্মীয়, এক ফোনে তোমাকে জেলে পাঠিয়ে দেব।” শেষ পর্যন্ত আব্দুর রহিম মিষ্টি বা টাকা ফেরত না নিয়েই ফিরে আসেন এবং বিষয়টি স্থানীয় গণমাধ্যমে জানান।
কলেজপাড়ার ছাত্র শাহাদাত হোসেন বলেন, ওয়েল ফুডের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের এমন অবস্থা হতাশাজনক। কলেজ ছুটির পর বন্ধুদের নিয়ে মাঝে মাঝে নাস্তা করতে যেতেন, কিন্তু স্টাফদের ব্যবহার এতটাই খারাপ যে প্রতিবাদ করলে প্রশাসনের ভয় দেখানো হয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে প্রতিষ্ঠানটির মালিক সিরাজুল ইসলাম নিজেকে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করেন এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে তুচ্ছতাচ্ছিল্যপূর্ণ ভাষায় কথা বলেন।
জেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে এমন একটি প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়ে ভোক্তারা দ্রুত ভোক্তা অধিদপ্তর ও প্রশাসনের মোবাইল কোর্টের কার্যকর তদারকি ও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, দিনের পর দিন মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার বিক্রি করে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করা হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে ওয়েল ফুড খাগড়াছড়ি শাখার মালিক মো. সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়রা আশা করছেন, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



























